৪.১. ইন্টারনেট মানে নেটওয়ার্ক?

আগে আমরা ভাবতাম ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দিতে লাগবে নেটওয়ার্ক। ওটা করলেই ছুটি। বাকি বাদ, আসল জিনিস তো নেটওয়ার্ক। দেশগুলোর সরকার 'সবার জন্য ইন্টারনেট' হুংকার দিয়ে নেমে পড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। ইন্টারনেটের প্রসার বাড়াতে কোটি টাকার বাজেট করে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বলা হয় বিটিসিএলকে। কোটি টাকা খরচ করেও তৈরি হয় নেটওয়ার্ক। তবে, কমে না দাম, বাড়েও না ইন্টারনেটের প্রসার। সমস্যাটা কোথায়? বুদ্ধিমান দেশগুলো কিছুটা পয়সা ঢাললো গবেষণায়। ফলাফল, এককথায় মাইন্ডব্লোইং!

পুরো সমস্যাটাকে দুভাগে নিয়ে আসলেন অর্থনীতিবিদরা। একপাশে সাপ্লাই সাইড, অন্যদিকে ডিমান্ড সাইড। খোলাসা করি আরেকটু। পৃথিবীটাই চাওয়া পাওয়ার। দাম বাড়ে চাওয়ার সাথে সাপ্লাইয়ের অসংগতি হলে। ইন্টারনেটটাও একটা প্রোডাক্ট। বাজারে পাওয়া যায়। একেবারে খোলা বাজারে। ইন্টারনেটটা আপনার কম্পিউটার [এখন কম্পিউটার মানে সবকিছু। আপনার হাতের ছোট্ট মোবাইল ফোনটার প্রোসেসিং স্পীড দেখেছেন কি? ইলেক্ট্রনিক বূক রিডারগুলো ব্রাউজ করতে পারে ইন্টারনেট। আরো কতো ডি দেখবো এর মধ্যে।] পর্যন্ত আসবে কিভাবে? ধরে নিচ্ছি ইন্টারনেটের আপনার দরকারী সার্ভিসটা আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ওখান থেকে সাবমেরিন কেবল হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। ওই ক্যাপসিটিটা আনতে হচ্ছে ঢাকা পর্যন্ত। ওই পাইপটা দামের জন্য কোনোভাবে চাপিয়ে দিলে বাড়বে দাম। ওই হোলসেল পাইপটা অনেক ধাপ পার করে আসে আপনার বাসায়। ফাইবার অপটিক লাইন, স্পেকট্রাম, মাইক্রোওয়েভ লাগছে এই সাপ্লাই চেইনে। এখন সাপ্লাই সাইডের কম্পোনেণ্টগুলো ঠিক মতো কাজ না করলে সমস্যা হবে ওই হোলসেলে।

পয়সা তো অনেক খরচ হলো সাপ্লাই সাইডে। আপনার বাসা পর্যন্ত এসে হাজির হলো হাইস্পীড ইন্টারনেট। দাম দেবেন কতো? সেটা নির্ভর করছে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর। দাম কমে কিভাবে? এক প্রোডাক্ট যখন অনেকে কেনে। একে বলে ইকোনোমি অফ স্কেল। ওয়ান পিস মেড, কারিগর ডেডে'র দিন শেষ। এক প্রোডাক্ট কোটি লোক কিনলে কমে আসে সাপ্লাই সাইডের সব কম্পোনেণ্টের দাম। এক মেগাবাইট স্পীডের একটা ফাইবার অপটিকের লাইন বিছাতে যা লাগে গিগাবাইটের জন্য খরচ এক। অথচ ব্যবহার করবে হাজার লোক, ভাগ হয়ে যাবে দাম। এটাই হচ্ছে ডিমান্ড সাইডের গল্প। তৈরি করতে হবে কোটি গ্রাহক, আর তাহলেই দাম নেমে আসবে পানির কাছে।

সার্ভিস প্রোভাইডারদের এক কথা। কম দামেও পোষাবে তাদের। দরকার একটা নির্দিষ্ট গ্রাহক সংখ্যা। ওর পর থেকে সবই দাম হবে পানির মতো। সাবমেরিন কেবল থেকে এক মেগাবাইটের একটা লাইন নিয়ে এসে শুধুমাত্র আপনাকে দিলে তাদের পয়সা উঠবে না। তারা নিয়ে আসবেন গিগাবাইট, হোলসেল রেটে, বিক্রি করবেন হাজারো লোককে। তাহলেই কমবে দাম। ওই নির্দিষ্ট সংখ্যার গ্রাহক হচ্ছেন 'ক্রিটিক্যাল মাস'। ওর পরের গল্প শুধু লাভ আর লাভ। সেই লাভ থেকে উপকৃত হবেন গ্রাহকেরা। মোদ্দা কথা, বাড়াতে হবে গ্রাহক সংখ্যা। হিসেবে দেখা গেছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্রাহক হচ্ছে সরকার। সরকারী অফিস, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ,ইউনিভার্সিটিকে গ্রাহক বানালে এমনিতেই সংখ্যা পৌছুবে কোটির কাছে। ইন্টারনেটের খরচ কমে আসবে পানির দামে। বাকি জনগণ পাবে তখন পানির দামে ইন্টারনেট।

সোজা কথায়, সাপ্লাই বাড়ালেই হবে না - সেটাকে কিনবে কে? সাধারণ মানুষ। সব মানুষ কিনবে তখন - যখন এর দাম চলে আসবে পানির কাছাকাছি। মানে, বাড়াতে হবে ডিমান্ড। 'ক্যাচ-২২ সিচুয়েশন'[ও এক আরেক গল্প। বোনাস চ্যাপ্টারে দেখুন, কাজে দেবে অনেক যায়গায়।] আর কি? তবে উপায় আছে।

Last updated

Was this helpful?