৪.৬. নেটওয়ার্ক অ্যাভেইলেবিলিটি গ্যাপ

একটা কথা বলে রাখি চুপি চুপি, 'ওয়ারলেস অ্যাক্সেস' রাজত্ব করবে আরো অনেক বছর। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার যেখানে তৈরি হয়নি শুরুর প্ল্যানিংয়ের অভাবে। আমার মতে, 'ওয়ারলেস অ্যাক্সেস' হচ্ছে একটা 'স্টপ গ্যাপ' সলিউশন। মানে পুরো সলিউশন না আসা পর্যন্ত একটা 'মেকানিজম'। বসে তো থাকবে না কেউ। তবে, এটা চলবে না শত বছর ধরে। ওয়ারলেস সারাজীবন রাজত্ব করবে 'গ্যাপে' - বাসা থেকে যাচ্ছেন অফিস, অফিস থেকে বাসা, ট্রিপে যাচ্ছেন শহরের বাইরে। অথবা বিদেশে। আর, বাসায় থাকবে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড। অফিসে কথা আর নাই বা বলি। স্পেকট্রামের কিছু 'ইনহেরেন্ট' সমস্যার কারণে এটা ফিক্সড এর মতো অতো 'রেজিলিয়েণ্ট' পারে না হতে। মাল্টিপল বিমফর্মিং ছাড়াও আরো অনেক প্রযুক্তি আসলেও 'ফিক্সড' হচ্ছে 'গ্যারানটিড' ধরনের জিনিস। স্ট্রীমিং ভিডিও দেখছেন ওয়ারলেস ইন্টারফেসে। চলছে ভালই, আবহাওয়া খারাপের কারণে হোক আর সিগন্যাল দুর্বলের জন্য হোক - দরকারী 'থ্রু-পুট' না পেলে সবই মাটি। ভিডিও কণফারেন্সে সমস্যা করলে তো ব্যবসাই শেষ।

'ওইয়ার্ড' মানে তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে তার না কাটা পর্যন্ত চলতে থাকবে আজীবন। অফিসে, বাসায় মূল লাইনটা আসছে ওই তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চার দিয়ে, বাকিটা হয়তোবা শর্ট রেঞ্জ অ্যাক্সেস পয়েন্ট নিচ্ছেন কেউ কেউ। 'ওয়াই-ফাই'কে আমরা তারের ইনফ্রাস্ট্রাক্চারেই ধরে নেই। তবে বাসার আর অফিসের ডেস্কটপ তারেই যুক্ত। ভিডিও কণফারেন্স চলে তারের ওপর। বিদেশে গেলেও অফিসে পাচ্ছেন কেবল। হোটেলেও পাচ্ছেন ওয়াই-ফাই, যার পেছনে রয়েছে শক্ত 'কেবল' ইনফ্রাস্ট্রাক্চার। মানে হচ্ছে - রাস্তায়, বাসে, বিমানে, গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজন পড়ছে এই ওয়ারলেস অ্যাক্সেস। ভবিষ্যতের কথা বলছি কিন্তু। বাসে, বিমানেও পাওয়া যাচ্ছে ওয়াই-ফাই, বড় বড় শহরেও আসছে মেট্রো-ওয়াই-ফাই। মোবাইল অপারেটরের স্পেকট্রামের বহুল ব্যবহার হবে আরো দশ বছর, এই বাংলাদেশে। সংখ্যায় বলবো সামনে।

বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট আসবে এই ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে। আমাদের এই বাংলাদেশে। আসতেই হবে। টাকা উড়ে বেড়াচ্ছে পুরো পৃথিবীতে, আফ্রিকাতে, আসতে চাইছে বাংলাদেশে। অনেকে জানে না নীতিমালা। বিশ্ব ব্যাংকের একটা স্টাডি পড়ছিলাম কাল রাতে। বুদ্ধিমান দেশগুলো খুঁজে বের করছে 'নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক গ্যাপ'। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটাকে বলছে 'নেটওয়ার্ক অ্যাভেইলিবিলিটি গ্যাপ'। ওই অংশটার দাম কয়েক বিলিয়ন ডলার। মানে এখানে উদ্যোক্তারা বের করে নিতে পারেন তাদের বিজনেস কেস। 'পয়সাঅলা' দেশের গল্প আলাদা। এনবিএন, ন্যাশন্যাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বের করছেন 'স্টিমুলাস' মানে প্রণোদনা প্যাকেজ। অস্ট্রেলিয়ার গল্প বলতে বলতে হয়রান করে ফেলেছি আপনাদের। সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের একই অবস্থা। ভুললে চলবে না, ব্রডব্যান্ড কিন্তু একটা ইনফ্রাস্ট্রাক্চার।

ভুল বুঝবেন না, ব্রডব্যান্ড বোঝাতে 'কেবল'কেই বোঝায় উন্নত দেশগুলোতে। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হলেও লাগবে স্পেকট্রাম, আমাদের মতো দেশে। দশ মেগাহার্টজের নিচে একেকটা চ্যানেল প্ল্যান? উহু, ওটাকে বলা যায় না ব্রডব্যান্ড। এজন্য দরকার আরো স্পেকট্রাম - দিতে হবে অপারেটরদের। হিসেব কিন্তু দিয়েছিলাম আগে। প্রথম 'থ্রীজি' লাইসেন্সটা ড্রাফট করার সময় নূন্যতম ব্যান্ডউইডথ দেবার কথা বলেছিলাম দশ। চার দশে চল্লিশ। চারটা অপারেটর। একজন নিতে পারে পনেরো। আমার দেশকে চিনি ভালোভাবে। এখানে 'কাভারেজ' ইস্যু নয়, বরং অপারেটরদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে ক্যাপাসিটি'র সমস্যা। ইন-বিল্ডিং সলিউশন নিয়ে আসছেন ফেমটোসেল দিয়ে। বিল্ডিং কোডে রাজউককে বলে দিতে হবে এগুলোর 'প্রোভিশনিং'য়ের কথা। দশের নিচে চ্যানেল প্ল্যানে বিটিএস কিনতে কিনতে পাগল হয়ে যাবে অপারেটর। মাঝখান দিয়ে গ্রাহক পাবে না দরকারী গতি। এমন নয় যে আমাদের ঘাটতি আছে স্পেকট্রামের। পড়ে আছে এখনো বেশ কিছু। ওটা ব্যবহার না হলে ক্ষতি সবার। ওটার এনপিভি মানে 'নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু' যাচ্ছে কমে দিন দিন। আবার অপারেটরদের 'স্পেকট্রাল এফিশিয়েণ্ট' করতে লাগবে 'বুদ্ধিমান' রেগুলেটর। দরকার ভারসাম্যতা। প্রতিটা নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট কিনতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। উপায়?

বুদ্ধিমান দেশগুলো ফাইবার নেটওয়ার্ক দিয়ে ভরে ফেলছে মেট্রো এরিয়াগুলোকে। সরিয়ে ফেলছে পুরোনো 'পয়েন্ট টু পয়েন্ট' স্পেকট্রাম ব্যাক-হল। দেয়া লাগছে না আগের মতো স্পেকট্রাম চার্জ। ওই স্পেকট্রাম বরং দেয়া যেতে পারে নতুন অপারেটরদের। এই স্পেকট্রাম 'রিভোকেশন প্ল্যান' করতে হবে রেগুলেটরকে। প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে না বাজারে? লাস্ট মাইলে থাকবে স্পেকট্রাম - আরো অনেক বছর। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। তাই মোবাইল অপারেটররাও তারের স্বাদ দিতে চাচ্ছেন তাদের গ্রাহকদের। যুক্ত করছেন তাদের থ্রীজি/এইচএসপিএ+/এলটিই বিটিএসগুলোকে একেবারে ফাইবার দিয়ে। গিগাবিট ইথারনেট। মালয়েশিয়াতে তো এটা একটা লাইসেন্সিং শর্ত। থ্রীজি'র ব্যপারে। এলো থ্রীজি এতদিন পর, মন ভরাতে হবে গ্রাহকদের। অনেক গ্রাহক হলেই না দাম কমবে ইন্টারনেটের। দুই শার্টে একটা ফ্রী, একহাজার শার্টে দাম অর্ধেক। প্রত্যেকটার। জানতে হবে ওই 'ক্রিটিক্যাল মাস'টার কথা। যে নূন্যতম সংখ্যাটা হলে যিনি প্রোডাক্টটা তৈরি করছেন তিনি দাম কমাতে পারেন - অনেক অনেক বেশি।

Last updated

Was this helpful?