৪.২. মেলাবেন কিভাবে ডিমান্ড আর সাপ্লাই সাইডের যোগসূত্র?

'সাপ্লাই সাইডে' অগ্রগতি দেখার মতো 'বুদ্ধিমান'[যারা 'আর এণ্ড ডি' করে নামেন মাঠে। মাঠে নেমে নয়।] দেশগুলোতে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আর তাদের বিজনেস প্ল্যান দিয়ে ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কোম্পানীগুলো সাহায্য করছে অপারেটরদের। গ্রাহকদের কাছে টানতে মূলত:। উন্নত দেশগুলোর সাথে সাথে আমাদের দেশের কোম্পানীগুলো ফাইবার অপটিক ইন্সটল করছেন আমাদের বাসার আর অফিসের আশেপাশে। বাসার 'ক্যাট-৫' কেবল পাল্টে ওই কেবল বসিয়েছেন আমার পাড়ার আইএসপি। অনেক আগেই। এমন না যে থাকি আমি গুলশান বনানী। আমার দেখাদেখি নিয়েছেন আশেপাশের অনেকেই। কমে আসছে দাম। আগে আমার একার জন্য একটা ফাইবার অপটিক কেবল সাপোর্ট করতো না তাদের বিজনেস কেস। এখন নিচ্ছেন অনেকে। ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে খরচটাও।

ওয়ারলেস ইনডাস্ট্রি তো বুম করছে আমাদের মতো দেশগুলোতে। ফিক্সড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কম থাকাতে কিছুটা সমস্যা হলেও মোবাইল গ্রাহক বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অপারেটররা দক্ষতার সাথে 'অপটিমাইজ' করছেন তাদের নেটওয়ার্ক - আরো বেশি সাপ্লাই দেবার জন্য। আর সে কারণে আমাদের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা খারাপ নয় মোটেই। তবে ডাটার জন্য সাপ্লাই সাইড কিছুটা ভিন্ন। মোবাইল ইনডাস্ট্রির আসল কাঁচামাল হচ্ছে স্পেকট্রাম। সাধারণ ভয়েস সার্ভিস থেকে ডাটার জন্য দরকার বড় পাইপ। আর সেই পাইপটা বড় হবে যদি স্পেকট্রাম বেশি থাকে তার। ইনফ্রাস্ট্রাক্চারের সাথে স্পেকট্রামটাও পড়ে যাচ্ছে সাপ্লাই সাইডে। আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য - বিশেষ করে।

মনে আছে আকামাই এর কথা? ইন্টারনেটকে সহজভাবে আপনার হাতে তুলে দিতে পৃথিবীব্যাপী 'কনটেন্ট ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক' চালাচ্ছে তারা। যাই ক্লিক করছেন তা আর আসছে না ওই দেশ থেকে। বরং আসছে এশিয়ার কোনো দেশের কনটেন্ট ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের কপি থেকে। তারা ইন্টারনেট নিয়ে খায় দায় 'এবং' ঘুমায়। তাদের হিসেব মতে ইন্টারনেট ট্রাফিক বাড়ছে পাগলের মতো। কোথায় কি ন্যারোব্যান্ড, ব্রডব্যান্ড স্পীডে কনটেন্ট ডেলিভারী দিয়ে কূল পাচ্ছেন না তারা। এটা না হয় গেলো কনটেন্ট নিয়ে। ব্রডব্যান্ড 'এনাবলড' ডিভাইস দিয়ে সয়লাব হচ্ছে বাজার। আইডিসি, মনে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কার্পোরেশনের প্রোজেক্শন তো মনে হবে পাগলের প্রলাপ। স্মার্টফোনের শিপমেণ্ট এক কোয়ার্টার থেকে পরের কোয়ার্টারে বাড়ছে নব্বই শতাংশ করে। ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, পাতলা বহনযোগ্য ডিভাইস দিয়ে বাজার সয়লাব। প্রশ্ন হচ্ছে - মোটা পাইপটা কোথায়? হ্যা, ওটার জন্যই তো কলম ধরা।

'ডিমান্ড সাইড' নিয়ে তুলকালাম ঘটনা ঘটছে দুনিয়ায়। গতমাসে পাল্টালাম আমার আগের অ্যানড্রয়েডটা। পুরোনো ফোন থেকে নতুন ফোনে যেতে মানুষ চিন্তা করে হাজারটা। আমারো চিন্তা হলো খানিকটা। মানুষ তো[কারো কারো মুখে চিলতে হাসি দেখা গেলো মনে হলো।]! দেখা গেলো আগের ফোনটার লোকাল স্টোরেজে নেই কিছুই! চালু করলাম নতুন ফোন, লগইন করলাম গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে। মুহূর্তের মধ্যে চলে আসলো বারো হাজারের মতো কনট্যাক্টস - নতুন ফোনে। গুগল কনট্যাক্টসেই সেভ করা হয় সচরাচর। হাঙ্গআউট নিয়ে এলো বাকি এসএমএসগুলো। ক্যামকার্ড ইন্সটল করতেই চলে এলো আরো হাজারখানেক। এলো ক্লাউড থেকে। ছবি যাই তুলি সেটা চলে যায় গুগল+এর ফোটোতে। আটচল্লিশ হাজারের মতো ছবি আছে ওখানেই। হাই-ডেফিনেশন ছবিগুলো যাচ্ছে ফটোশেয়ারিং সাইট ফ্লিকারের অ্যাকাউন্টে। যায়গা বেশি নয়, মাত্র এক টেরাবাইট! ক্যামস্ক্যানারে সাজানো আছে ক্লাউডবেসড ডকুমেন্টগুলো - থরে থরে। 'টাস্ক' আর 'টু-ডু' লিস্টির অ্যাপ্লিকেশন নতুন করে সিন্ক্রোনাইজ করে নিলো আইভরি কোস্টের সময়কাল। হাতির মাথা'র এভারনোট নিয়ে এলো আটশোর মতো নোট। হাতি নাকি ভোলে না কিছুই। কি সাংঘাতিক! আছি কিন্তু তাদের কোস্টেই। ড্রপবক্স আর কপি'র মতো ক্লাউড সার্ভিসগুলো ষোলকলা পূর্ণ করলো বাকি জিনিসগুলো এনে। আর শেখার জিনিসপত্র তো আছে সব 'মুকে', ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্সের ভিডিও স্ট্রীমিং শেষ করে দিচ্ছে মাসের গিগাবাইটের কোটা। যাবো কোথায়?

ব্রডব্যান্ড আমাদেরকে বের করে নিয়ে এসেছে 'সনাতন' মডেলের বাইরে। দরকারী সব কাগজপত্র রাখা অন্য যায়গায়। ইমেইল থেকে সবকিছুই আমাদের বাসার বাইরে - অজানা সব সার্ভার ফার্মে। আপনার ফোনই মাসে টানছে দশ বিশ গিগাবাইটের বেশি। মানে হচ্ছে ডিমান্ডও বেড়েছে হাজারগুণে। ব্রডব্যান্ডই সাহায্য করছে গুগল, ফেসবুকের মতো বিলিয়ন ডলারের ইনডাস্ট্রিকে বড় হতে। ইউটিউবকে বানিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিভি স্টেশন হিসেবে। হোয়াট'স-অ্যাপের মতো নিরানব্বই সেন্টের অ্যাপ্লিকেশন বেচাকেনা হয় দেশের বাজেটের বেশি টাকা দিয়ে। অনলাইনের ওপর নির্ভরশীলতা ডাটার ডিমান্ড বাড়াচ্ছে হু হু করে। বাড়বে আরো নির্ভরশীলতা। ওটা ভালো না খারাপ সেদিকে যাচ্ছি না আমি। আর আমি আপনি কি মনে করলাম সেটাকে টেক্কা দিয়ে বাড়তেই থাকবে ডাটার ডিমান্ড কার্ভ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ডাটার চাহিদা পাগল করে দিচ্ছে সার্ভিস প্রোভাইডারদের। মোবাইল অপারেটররা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ডাটার ভবিষ্যত প্রোজেক্শন করতে যেয়ে। বছরের কয়েকের মধ্যে আমার আপনার ব্যবস্যার পুরোটাই চলে যাবে অনলাইনে। রাস্তার পাশের শাকসবজি, ধুপি সব চলে আসবে অনলাইনে। আর সরকার যখন আসবে - তার সব সার্ভিস নিয়ে অনলাইনে? ট্যাক্স, জমির খাজনা, গ্যাস, বিদ্যুত্‍ আর পানির বিল? সব জমা হবে সরকারের ক্লাউডে।

ডিমান্ড জেনারেশনের দেখেছেন কি?

সেটার জন্য প্রস্তুত আছে কি ইনফ্রাস্ট্রাক্চার? রেগুলেটর সাহায্য করবে কিভাবে?

Last updated

Was this helpful?