৪.৩. ডিমান্ড বাড়ানোর নীতিমালা
ইন্টারনেটের সফল দেশগুলোর নাম তো জানেন সবাই। ওদের ইতিহাস পড়ছিলাম এক এক করে। এদের প্রায় প্রত্যেকেই ইন্টারনেটের শুরুর দিকে জোর দেয় ডিমান্ড 'ফ্যাসিলিটেশন' - ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ানো গল্প নিয়ে। সে কারণে তাদের আগের নীতিমালাগুলো 'সাপ্লাই সাইড' থেকে 'ডিমান্ড তৈরি' নিয়ে ব্যস্ত ছিলো বেশি। বাজার তৈরি করা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট মানুষের কি কি সুবিধা দিচ্ছে সেটা নিয়ে জোর প্রচারনা ছিলো সবসময়ে। সরকারী প্রতিটা অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে গিয়েছিলো ইন্টারনেটে। ইন্টারনেট মানে স্বচ্ছতা - নয় কোন দালালী - মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের নিশ্চিহ্ন করার যা যা ব্যবস্থা নিতে হয় সব করেছিলো দেশগুলো। ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করার হাজারো পন্থা বের করেছিলো গনশুনানী করে। পার্টনার করে নিয়েছিলো ইনডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের। বলেছে - কমিয়ে দাও ইন্টারনেটের দাম - কি লাগবে তোমাদের? কোথায় কোথায় পাল্টাতে হবে নীতিমালাগুলোকে? দেখিয়ে দাও, ঠিক করে দিচ্ছি এক এক করে। যা যা পেরেছে ঠিক করে দিয়েছে রেগুলেটর।
নিয়ে আসো আরো গ্রাহক বান্ধব সেবা, নিয়ে যাও ওই 'বটম অফ দ্য পিরামিডে'র লোকটার কাছে। ওর কাছে পৌছানো মানে হচ্ছে সবার কাছে পৌছানো'র কাজটা হয়েছে ভালোভাবেই। পিরামিডের সবচেয়ে নিচের স্তরে যে মানুষগুলো আছে তাদের দেখভাল করবে কে? ওই দেখভাল করার জন্য ছাড় দাও অপারেটরদের, উইন উইন সিচ্যুয়েশন। আমরা দেখবো অপারেটরের কিছু দিক, তখন সেও দেখবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষটকে। কত ছাড়ে কতো সুবিধা - সেটা আবার দেখবে রেগুলেটর। রেগুলেটরের রোল পাল্টে গেছে অনেক আগেই - বুদ্ধিমান দেশগুলোতে। টেলিকম রেগুলেটর ইদানিং দেখছে শুধুমাত্র স্পেকট্রাম আর নাম্বারিং। বাকি সব চলে গেছে 'কনজ্যুমার প্রোটেকশন' আর 'কম্পিটিশন' এজেন্সির কাছে। গ্রাহকস্বার্থ ব্যাপারটা কতো বড় জিনিস সেটা বুঝেছি অনেকগুলো রেগুলেটরের 'অ্যানুয়াল রিপোর্ট' দেখে। সাইটে আছে দেয়া। 'বুদ্ধিমান' দেশগুলোতে গেলে ওটা ছিলো একটা 'মাস্ট' আইটেম - নিয়ে আসার।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি ভালো করেই - ইন্টারনেটে সফল দেশগুলোর অনেকেই মুখাপেক্ষী হয়ে ছিলো না অপারেটরদের ওপর। সরকারী টাকা খরচ হয়েছে 'এসপিভি'র ওপর। তৈরি করেছে ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাক্চার। যুক্ত করেছে গ্রামগুলোকে শহরের সাথে, বিছিয়েছে হাজারো কিলোমিটারের ফাইবার অপটিক কেবল। এসপিভি, স্পেশাল পারপাজ ভেহিকেল। সবার অংশগ্রহণে একটা কোম্পানী। সরকারের একটা 'স্টেক' থাকলেও ম্যানেজমেন্টে হাত দেয় না। ওটা ছেড়ে দেয়া থাকে দক্ষ ম্যানেজমেন্টের ওপর। এটা নিয়ে লিখেছি অনেকবার। মনে আছে বিটি, ব্রিটিশ টেলিকমের কথা? ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কোম্পানীর সংখ্যা দুটোই যথেষ্ট। পুরো দেশকে যুক্ত করবে 'ব্যাক টু ব্যাক' - সব ব্যাকবোনে। অ্যাক্সেস কোম্পানীগুলো, হতে পারে মোবাইল, পিএসটিএন অথবা আইএসপি - তাদের 'লাস্ট মাইলের' আগের 'মিডল মাইল' নেবে ইনফ্রাস্ট্রাক্চার কোম্পানী থেকে। লাস্ট মাইলে এখনো দারুন কাজ করছে স্পেকট্রাম।
আসল কথাটা বলিনি এখনো। সরকারী ফান্ডের একটা বড় অংশ যায় 'আর এণ্ড ডি'তে। মানে, ইউনিভার্সিটিতে। রিসার্চ ছাড়া দুনিয়া অচল। ইন্টারনেটকে কিভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে পুরো দেশে - এটা নিয়েই তৈরি হয় বিশাল বিশাল প্রজেক্ট। নীতিমালা বানানোর প্রজেক্ট। কোন নীতিমালায় পয়সা নষ্ট হবে কম। ওর মধ্যে থাকবে দেশীয় কনটেন্ট তৈরির জন্য বিশাল প্রণোদনা, কারণ তাহলে সবই 'হোস্ট' হবে দেশের ভেতর। এছাড়া ওই কনটেন্টগুলো পড়তে পারবে সবাই। মনে আছে জিপিটি'র কথা? 'জেনারেল পার্পাজ টেকনোলজি'। বললে হবে না যে - "বুঝি না ইন্টারনেট"। দরকার পড়লে হাসপাতালের উচ্চপ্রযুক্তির জিনিসপত্র বুঝতে পারছি কিন্তু আমরা - তাহলে সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষার ফী দিতে পারবো না কেন?
দরকার প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রায়োগিক বিদ্যা। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে ওই দেশগুলো - তাদের বয়স্কদের। চালিয়েছে 'ডিজিটাল লিটারেসী প্রোগ্রাম'। ওর কিছু 'স্যাম্পল'ও ছিলো আমার কাছে। দূরে নয়, সিঙ্গাপুরে গেলে পাবেন ভুরি ভুরি।
Last updated
Was this helpful?