৬.২ লোকাল লুপ আনব্যান্ডলিং
I do have a political agenda. It’s to have as few regulations as possible.
- Dan Quayle
৪৭৭.
উনিশশো পঞ্চাশ বা ষাট সালের কথা বলছি। বাজার খুলে দেয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাস্ট্র মাইক্রোওয়েভ লাইসেন্স দিলো কয়েকটা। এমসিআইকে। পরে লঙ ডিসটেন্স ক্যরিয়ার লাইসেন্সও পেল তারা। দিয়েছিলো এফসিসি। টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট মানে বাসার ফোন এডাপটার উন্মুক্ত করা হলো অনেক পরে, উনিশশো সাতাত্তুরের দিকে। মানে যে কেউ সংযোগ নিতে পারবে ওখান থেকে। টেলিফোন লাইন এক, তবে সার্ভিস প্রোভাইডার হতে পারবে আলাদা। গুগল করুন এলএলইউ, মাথা খারাপ করা আইডিয়া। এফসিসি মানেনি। তো হয়েছে কি? কোর্টের রায় গিয়েছিলো বেসরকারী কোম্পানিগুলোর পক্ষে। টিএন্ডটির লাইন – দাও ল্যান্ড ফোন, কর ফোনের ব্যবস্যা। তবে লাইন লীজ দিতে হবে ন্যায্য দামে। অন্য কোম্পানিগুলোকে।
সরকারী কোম্পানী যখন টেলিফোন লাইন বিছিয়েছিল, তখন না ছিলো প্রতিযোগিতার চাপ, না ছিলো অন্য কোম্পানী। বরং সেটাই ছিলো একমাত্র মনোপলি। সরকারের পক্ষ থেকে ছিলো ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন, দেদারছে খরচ করেছে করদাতাদের পয়সা। এরপর দেয়া হলো আরো অনেকগুলো পিএসটিএন লাইসেন্স। বেসরকারি ভাবে। ব্যবসায়িক দিক দিয়ে দেখলে কোম্পানীগুলোর নতুন করে লাইন বেছানোর কোন 'ইন্সেন্টিভ' রইলো না তাদের কাছে। ফলে, মানুষের বাসা থেকে এক্সচেঞ্জের 'মেইন ডিসট্রিবিউশন ফ্রেমওয়ার্ক' পর্যন্ত এই কপার কেবলটার 'ডুপ্লিকেট' তৈরি করতে না পারার ফলে প্রতিযোগিতা থাকলো না এখানে। তাই বলে বসে থাকবে রেগুলেটর?
সরকারী কোম্পানীর নেটওয়ার্ক এলিমেন্টগুলোকে আলাদা ভাবে ভাড়া দেবার নীতিমালা এলো বেসরকারি কোম্পানীগুলোকে সাহায্য করার জন্য। এছাড়াও সরকারী ইনভেস্টমেণ্টের সর্বোত্তম ব্যবহার, বেসরকারি খাতে উদ্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করতে এলো ইউএনই, 'আনব্যান্ডলিং নেটওয়ার্ক এলিমেন্ট' নীতিমালা। মানুষের বাসায় ঢুকতে পারছে না নতুন কোম্পানীগুলো। আপনি কি নেবেন নতুন লাইন? আরেকটা লাইন থাকা স্বত্বেও? ততোদিনে এগিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞান। অনেকগুলো সার্ভিস একসাথে দেয়ার প্রযুক্তি চলে এসেছে এর মধ্যে। ওই এক কপার দিয়ে। 'লোকাল লুপে' প্রতিযোগিতা আনতে রেগুলেটরী কমিশন তৈরি করলো এলএলইউ, 'লোকাল লুপ আনবান্ডলিং' নীতিমালা। করদাতাদের টাকায় তৈরি মাটির নিচের হাজার কোটি টাকার কপারের পুরো ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলো রেগুলেটরী এজেন্সি। এক লাইন, চলে ফোন, ডিএসএল গোত্রের বিভিন্ন ব্রডব্যান্ড সার্ভিস, আইপিটিভি এক সাথে।
৪৭৮.
টেলিফোন লাইন দিয়ে নিচের দিকের ফ্রিকোয়েন্সি মানে ৩০০ হার্টজ থেকে ৩.৪ কিলোহার্টজ ব্যবহার হয় ভয়েসের কাজে। ওপরের ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে যতো ধরনের ডিএসএল মানে ডাটা সার্ভিস আছে তা ছেড়ে দাও প্রতিযোগীদের কাছে। ওতে ভয়েস ব্যবস্যার সমস্যা হয় না কখনো। লাইন একটা হলেও ডাটা সার্ভিস ব্যবহার করছে ওপরের ফ্রিকোয়েন্সি। ফোন আর ডাটা চলে একসাথে। এক ফোন লাইন লীজ নিতে পারে কয়েকটা কোম্পানি। সরকারী অব্যবহৃত রিসোর্সের সর্বোত্তম ব্যবহার। আনবান্ডল কর লোকাল লুপ। মানে ছেড়ে দাও এমডিএফ, আইএসপিদের হাতে। ন্যায্য দামে। পরের দিকে প্রায় সব রেগুলেটর বাধ্য করেছে তার সরকারী কোম্পানিকে। আমাদের হয়নি এখনো। এই এমসিআই কিন্তু এখন বিশাল গ্লোবাল প্লেয়ার। কি নেই তাদের? পৃথিবী জুড়ে সাবমেরিন ক্যাবল? নাম কিন্তু মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনস ইনকর্পোরেটেড!
৪৭৯.
আজকের মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের এই চরম উৎকর্ষের পেছনে কাজ করেছে ওদের সুদূরপ্রসারী টেলিযোগাযোগ নীতিমালা ১৯৯৬। এটা একটা মাইলফলক বটে। আমার তৈরী বেশ কিছু নীতিমালাগুলোর মধ্যে এর প্রভাব অনস্বীকার্য। জ্ঞান, ইন্টারনেট, প্রাইভেটাইজেশন আর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছড়িয়ে দেবার জন্য এই নীতিমালাটা সব দেশের রেগুলেটরদের পড়া উচিত একবার। টেলিযোগাযোগ, মিডিয়া, ইন্টারনেট আর ব্রডকাস্টিং – সব কিছুই আছে এখানে। স্থানীয় এক্সচেঞ্জগুলোতে ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন মানে ক্যাবল টিভি ব্যবস্যার সুবিধা করে দেয়ায় লাভ হলো সবারই। এক রিসোর্সের ওপর দিয়ে ভাগাভাগি করে ব্যবস্যা শুরু করলো কোম্পানিগুলো। এই নীতিমালা প্রাইভেটাইজেশনের স্বার্থে রেগুলেটরের অনেক ক্ষমতা কেড়ে নিলেও তৈরী করলো প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশ। ডি-রেগুলেট করে দিলো অনেক কিছুই। আর সেকারণে গুগল, ইউটিউব, ফেইসবুক আর হোয়াট’স-অ্যাপের মতো কোম্পানি বাসা বাঁধে এই মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে। বলুনতো – কাদের আমলে তৈরী হয়েছিল এই নীতিমালাটা? ঠিক বলেছেন – ক্লিনটন আর আল গোরের সময়ে। মাথাঅলা লোক ছিলেন দুজনই।
Last updated
Was this helpful?