৫.৭. সাবমেরিন কেবলের গল্প
‘নতুনদেশ’ স্বাধীনতা পেয়েছে বছর পাঁচেক আগে। টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন তৈরী হলেও সরকারী কোম্পানির চাপে কাজ করতে পারেনি গত বছরগুলোতে। আশার খবর, ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারগুলো বোঝেন ভালো এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যান হিসেবে। এবছরের শুরুতে।
কাকে? বলতে শুনলাম আপনাকে।
কাকে আবার? আপনাকে।
ম্যানেজমেন্টে দক্ষ, দেশটার তুখোড় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নাম দিয়েছে পত্রপত্রিকা। ব্রডব্যান্ড মানে জ্ঞান। আর এই জ্ঞানকে সব জায়গায় পৌছাতে বদ্ধপরিকর এই মন্ত্রী অনেকটাই কাজ করে দিচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রীমহোদয় ভালোভাবেই জানেন কিভাবে ক্ষমতায়ন করতে হয় রেগুলেটরকে। বড় বড় সিদ্ধান্তে কমিশনের মতামত নিয়ে নেন আগেই। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য সাপ্লাই সাইডের এর ‘সরবরাহ অংশটা’ নিয়ে খুবই চিন্তিত উনি। সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানিটা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের একমাত্র সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন। রেগুলেটরি নীতিমালা অনুযায়ী ‘বটলনেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ হিসেবে কোম্পানিটা থেকে মুনাফা না করার কথা বলছেন আগে থেকে। বলেছেন সরকারকে। ‘নতুনদেশে’র ইন্টারনেটের ডিমান্ড ফোরকাস্টিং থেকে শুরু করে ‘পুশ-সেল’, কিছুই করতে পারছে না ওই কোম্পানিটা। দক্ষ জনবলের অভাবের কথাটাই তারা বলছে – ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করার পর তার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে শিক্ষা উপকরণ ছড়িয়ে দেবার কাজটা নিয়ে কথা বলছেন মন্ত্রীমহোদয়। সাহায্য চাচ্ছেন সবার কাছে। দিন কয়েক আগে ফিরে এলেন আইটিইউ’র একটা মিনিস্টেরিয়াল ফোরাম থেকে। কয়েকটা স্লাইড গেঁথে গেছে উনার মাথায়। বাড়াতে হবে ডিমান্ড। তাহলেই কমে আসবে দাম। ইকোনমি অফ স্কেলের কারণে। এটা খানিকটা সাইকেলের মতো। ইন্টারনেট জনপ্রিয় করতে দাম কমানো আর ব্যবহারের ডিমান্ড বাড়ানোর হিসেব ঘোরে সুদে-আসলের চক্রের মতো। উপায় কি? কনসালটেন্টের কথা একটাই। খুলে দাও হবে বাজার। প্রতিযোগিতা করতে দাও সবাইকে। দেখো না, কয়টা সাবমেরিন কেবল এসে ঢোকে ‘নতুনদেশে’। তার আগে মনোপলি সরাও কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে। বেঁচতে দাও সবাইকে ওই একটা ল্যান্ডিং স্টেশনেই। আরআইও, মানে 'রেফারেন্স ইন্টারকানেকশন অফার' দিতে বলো সব কনসোর্টিয়াম মেম্বারদের। ওরাই মারামারি করে নামিয়ে নিয়ে আসবে ব্যান্ডউইডথের দাম। আপনার অফিসে যেয়ে অফার দিয়ে আসবে - এক গিগাবিট/সেকেন্ড নিলে দুই গিগাবিট গতি ফ্রী!
সাবমেরিনের কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো খুলে দিয়েছে অন্যান্য দেশ। প্রতিযোগী অপারেটরদের কাছে। ফলে, বাইরের অপারেটররা ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করছে পানির দামে। সরকারী মনোপলি থাকায় আগে বিক্রি করতো একটা কোম্পানি। ধরুন, বাজারে গেলেন মাছ কিনতে। ক্রেতা অনেক। আর বিক্রেতা একজনই। আপনি বলুন - দাম কমাবে বিক্রেতা? ‘নতুনদেশে’ এক কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনে কেবল এসেছে একটাই। ওর ভেতর দিয়ে আসতে পারে হাজার হাজার আইপিএলসি সার্কিট। মানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ইন্টারনেট সংযোগ। কেউ আনতে চাইবেন সিঙ্গাপুর অথবা ইতালি থেকে। আর সাবমেরিন কেবলে অব্যাহত ব্যান্ডউইডথ থাকে এতোই বেশি, সেখানে অন্যান্য কনসোর্টিয়াম মেম্বাররা এসে বিক্রি করতে পারে তাদের ব্যান্ডউইডথ। ধাক্কা খেয়ে দক্ষ হয়ে যায় সরকারী অপারেটর। এই নীতিমালায় এক মাছের বাজারে হাজারো বিক্রেতার ভিড়ে দাম কমে আসে পানির কাছে। ডিমান্ড ছুই ছুই করে আকাশে – ওই দেশগুলোতে। মজার একটা ব্যাপার কাজ করে ব্যান্ডউইডথের দাম নিয়ে। একটা ক্যাপাসিটির ওপর ব্যান্ডউইডথ গেলে ওটার দাম হয়ে যায় পানির মতো। ইন্টারনেট কিন্তু ফ্রী, দামটা পড়ে সংযোগের কারণে। সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি প্রায় আনলিমিটেড হবার ফলে ওই এক তারেই আনা যায় কোটি সংযোগ। তার একটাই, একটা সংযোগ নাকি কোটি সংযোগ – সেটা তো দেখবে না সাবমেরিন কেবল ইনভেস্টর। বেশি ব্যবহার, ইনভেস্টমেন্ট প্রায় এক। ফলে দাম নেমে আসে আমাদের সবার নাগালে।
আজ সকালে ডাক পড়েছে মন্ত্রীমহোদয়ের অফিসে। খানিকটা প্রি-শিডিউলড। বলা ছিলো আগে থেকে। দেশের বাইরের মিটিং থেকে ফিরলেই একাজটা করেন মন্ত্রীমহোদয়। বলা যায় নিষ্ঠার সাথে। ডাকেন রেগুলেটরসহ সম্পর্কিত ইন্ডাস্ট্রিকে। মিটিংয়ে যাবার আগেও মিনিস্কেলে একটা গণশুনানি মানে পাবলিক কনসাল্টেশন করেন ওই রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিদের নিয়ে। ইন্ডাস্ট্রিরাও থাকেন সফরসঙ্গী হিসেবে। তাদের নিজ নিজ খরচে। যাবার আগেই সবাইকে ভাগ করে দেন কয়েকটা স্টাডিগ্রুপে। ‘রাপোটিয়ার’ গ্রুপের মতোই কাজ খানিকটা। সরকার আর ইন্ডাস্ট্রি মিলিয়ে চমত্কার পার্টনারশীপ। মিটিংয়ে এজেন্ডা মিলিয়ে তৈরী করা হয় সাব-স্টাডিগ্রুপ। ফিরে এসে ফর্মাল রিপোর্ট জমা দেবার আগে আরেকবার মতামত নিয়ে নেন সবার। ও ধরনের একটা মিটিংয়ে ডাক পড়েছে আপনার। ইন্টারনেটের সাপ্লাই সাইডের ধারণা নিতে আপনাকে ডাকা।
ডিটেলস লেভেলে হোমওয়ার্ক করা আপনার নেশা। ইন্ডাস্ট্রি সেটা জানে। ভালো করেই। ফলে দরকারী জ্ঞান দিতে পিছপা হয়না তাঁরা। আরেকটা সাবমেরিন কেবল আনতে চাচ্ছেন মন্ত্রীমহোদয়। প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা ভালো বোঝেন উনি। সেটা মুখ ফুটে বলেছেনও আপনাকে। বার কয়েক। মিটিংয়ে আধা ঘন্টা আগে দেখা করতে বলেছেন আপনাকে। আলাদাভাবে। এটা উনি করেন – কিছুটা নিয়ম করেই। সবাই জানে ব্যাপারটা। কিছুটা আইসব্রেকিং সেশনের মতো। টুকটাক ইনপুট নেন মিটিংয়ে বিষয় নিয়ে। আপনি কি ধরনের চা বা কফি খান সেটাও যোগাড় করেন তার সহকারীকে দিয়ে। ভড়কে যায় অনেকে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীমহোদয় তার সাথে কাজ করা প্রতিটা মানুষের পরিবারের সমস্যাগুলো মিটিয়ে দেন বলার আগেই। ‘তুমি’ বলে কাছে টেনে নেন সবাইকে। তার ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কটা তাকে করেছে আরো তুখোড়।
আজকের মিটিংয়ে আপনার সাথে থাকছেন সচিব, উনার মন্ত্রণালয়ের। আরো থাকছেন ‘নতুনদেশ’ সাবমেরিন কোম্পানির চিফ একজিকিউটিভ। আপনার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সাবমেরিন কেবল বিষয়ক কনসালটেন্ট। টাইকো’তে ছিলেন অনেকদিন। এটিএন্ডটি’র সাবমেরিন সিস্টেমস ইনকর্পোরেটেড হিসেবে ছিলো যার নাম। ওপেনিং স্টেটমেন্ট এলো মন্ত্রীর কাছ থেকে। মিটিংয়ের শুরুতে বাইরের জ্ঞানটা ঝালিয়ে নিলেন সবার মাঝে। কি দেখেছেন – আর কোন দেশ কি করছে সেটার একটা ফিরিস্তি দিলেন সবাইকে।
জসিম, আরেকটা সাবমেরিন কেবল আনলে তো মাথা খারাপ তোমার। প্রতিযোগিতা করো না সবার সাথে খানিকটা? দক্ষতা বাড়বে তোমারই। ‘ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বললে তোমারটা হয় এক নম্বরে। ওটা তো করতে হবে কস্ট বেসড। মুনাফা নয়। কস্ট মডেলিং করছ কি? মানে কতো দাম হওয়া উচিত এখন?
বুঝতেই পারছেন, সাবমেরিন কেবলের চীফ একজিকিউটিভ হচ্ছেন জনাব জসিম। চমত্কার মানুষ। আন্তর্জাতিক ‘বল গেম’ ভালোই বোঝেন উনি। আবার, নিজের কোম্পানির দেখভাল তো করতে হবে উনাকে। জাস্টিফিকেশন তুলে ধরলেন বরাবরের মতো। বেসরকারী কোম্পানির মতো ‘ওভারনাইট’ সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যাপারটাও তুললেন তিনি। অনুযোগটার তীর কিছুটা গিয়ে পড়ছে সচিব মহোদয়ের ঘাড়ে। সেটা বোঝেন মন্ত্রীও। সরকারী কোম্পানির বোর্ড মিটিং বেসরকারী কোম্পানির মতো দ্রুত সম্ভব নয় অনেক কারণে। ব্যাংকের লোন, কস্ট মডেলিং করার জটিলতা, বাড়তি অপারেটিং কস্টের সাথে ম্যানেজমেন্ট সমস্যা – বাদ দিলেন না কিছুই। নতুন সাবমেরিন কেবলটাও করতে চাচ্ছেন উনি নিজে। ‘ওপেন এক্সেস’ কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের খসড়া রেগুলেশন নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন উনি। সেটা নিয়ে বার কয়েক আলাপ করেছেন আপনার সাথে। প্রতিযোগিতা ভয় পান না তিনি। তবে এমুহুর্তে নয়। কনসোর্টিয়াম মেম্বারদের ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করতে দিলে প্রচন্ড চাপে পড়বেন উনি। ‘কস্ট কাটিং’ থেকে শুরু করে দক্ষতার খাতিরে জনবল কমিয়ে আনতে হবে উনাকে। সরকারী কর্মচারীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্রয়ের হাসি দিলেন মন্ত্রী। সরকার সবকিছু নিজে করলে দক্ষতার মানদন্ড আসবে কোথা থেকে? সরকারের তো আছে একটা। কস্ট মডেলিংয়ে জন্য বছরখানিক সময় কে দেবে তোমাকে? তোমাদের অদক্ষতার জন্য গ্রাহককে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। গ্রাহকস্বার্থে তো তোমার জায়গায় প্রতিযোগিতা আনা জরুরি! নিরাশও করলেন না চীফকে। বাকি ব্যাপারগুলো নিয়ে একটা প্রস্তাবনা চাইলেন সাবমেরিন কেবল কোম্পানির কাছে।
‘আমার মাথা’ ফিরোজ কোথায়?
মন্ত্রী তাকালেন আপনার দিকে। বুদ্ধিদাতা হিসেবে আপনাকে ‘ইভালুয়েট’ করেন প্রায় সব জায়গায়।
তোমার প্লেটে কি কি আছে শুনি? ওপেন এক্সেসের ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করছি আমরা।
বুঝে গেলেন হিন্টস - আজ নয় ওপেন এক্সেস।
অল্প কথার মানুষ আপনি। সরাসরি চলে গেলেন বিষয়টাতে। মন্ত্রী মহোদয়ের পছন্দের স্লাইড দুটো নিয়ে এসেছেন আগে থেকে। গত কয়েক বছরের ইন্টারনেট পেনিট্রেশন দেখে সামনের পাঁচ বছরের একটা ডিমান্ড ফোরকাস্টও তৈরী করে নিয়ে এসেছেন নিজে থেকে। কনজারভেটিভ ফোরকাস্টিং। ‘নতুনদেশ’ ধারণা করছে পাঁচ বছরে ব্যান্ডউইডথ লাগতে পারে প্রায় চারশো জিবিপিএস। এখন ব্যবহার হচ্ছে মাত্র দশ। পুশ-সেলের অভাব, ব্যান্ডউইডথের অতিরিক্ত দাম আর লোকাল ব্যাকহল মানে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরীর কোন প্রনোদনা না থাকায় সাবমেরিন কেবলের ডিমান্ড বাড়ছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দাম কমানোর কয়েকটা গল্প নিয়ে আসলেন এখানে। সাবমেরিন কোম্পানীকেই উদ্দেশ্য করে বলা।
সবাই মানে সাবমেরিন কেবলকে ল্যান্ডিং করানোতে চলে যায় অনেক টাকা। ক্যাপেক্স, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার তো পাল্টানো যাবে না অতীতে গিয়ে। ইউনিট দাম আসতে হবে পুরো ইউনিট খরচের ভেতর থেকে। আমি না, যেকোন রেগুলেটর বলবে তাই। প্রতি মাসের একেক মেগাবিট/সেকেন্ডের দাম আসবে ওপেক্স আর ক্যাপেক্স যোগ করে। সেটাকে ভাগ দিতে হবে পুরো ডিজাইন ক্যাপাসিটি দিয়ে। কতো ব্যবহার হচ্ছে - সেটা দিয়ে নয়। রিটেল মার্কেটে দাম আসবে ফরওয়ার্ড লুকিং কস্ট ম্যাট্রিক্স থেকে।
বুঝিয়ে বল, ফিরোজ। বললেন মন্ত্রীমহোদয়।
সাবমেরিন কেবলের ‘লো ইউটিলাইজেশন’ বিপদে ফেলে দেশগুলোকে। প্রথম বছরে তো জানতে পারছেন না কতো বিক্রি হবে আসলে। ডিমান্ড ফোরকাস্টিং জানা থাকার কথা না। এখন, প্রথম বছরেই পুরো সাবমেরিন কেবলের দাম তুলতে চাইলে কেউ কিনবে না ব্যান্ডউইডথ। ফলে তৈরী হবে না ডিমান্ড। ভয়ঙ্কর একটা চক্রে পড়ে যাবেন আপনি। মুরগী না ডিম আগে। বুদ্ধিমান দেশগুলো বের হয়ে এসেছে এই চক্র থেকে। বহু আগে।
ফার্স্ট থিং ফার্স্ট! ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের সবচেয়ে বড় গ্রাহক হচ্ছে সরকার নিজে। সরকারের অফিস, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশনে ব্যান্ডউইডথ না দিলে ক্ষতি সরকারের। নিজের ডিমান্ডগুলোকে জড়ো করতে হবে আগে। এটাকে আমরা বলছি ‘ডিমান্ড এগ্রিগেশন’। আমরাই যদি না তৈরী করি বড় একটা ডিমান্ড সরকারের ভেতর, তাহলে বাকিরা তো বসে থাকবে কবে কমবে দাম। ততোদিনে ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক বেশি। ডিমান্ড বাড়াতে সরকারকে কিনতে হবে আগে। তাহলেই গ্রাহকপর্যায়ে দাম কমে আসবে ব্যান্ডউইডথের। তিন বছরেই শেষ করে দেবো আমাদের সাবমেরিন কেবলের ক্যাপাসিটি! এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। আগে।
আসি পরের ধাপে। ব্যবসা হিসেবে ‘আরওসিই’, ‘রিটার্ন অন ক্যাপিটাল এমপ্লয়েড’ নিয়ে পাগল থাকে কোম্পানিগুলো। সাবমেরিন কেবল কোম্পানিও তো ব্যতিক্রম হবে না গল্পটা থেকে। কতো তাড়াতাড়ি মূলধন তোলা যাবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে কোম্পানিগুলো। আর থাকবে না কেন? ব্যাঙ্ক, শেয়ারহোল্ডার, কোম্পানির বোর্ড মেম্বাররা পাগল করে রাখে কোম্পানিটাকে। টাকা তোলার ব্যাপারে। যতো তাড়াতাড়ি - ততো ক্রেডিট দেয়া হয় চিফ একজিকিউটিভদের। এখানে বড় কাজ আছে রেগুলেটরের। ‘ওয়েইটেড এভারেজ কস্ট অফ ক্যাপিটাল’ মানে সবচেয়ে কম কতো টাকা নিলে খুশি থাকবে ওই কোম্পানির ক্রেডিটরটা, সেটা বের করতে হবে আগে। ক্রেডিটর হচ্ছেন গিয়ে - যারা ধার দিয়েছেন টাকাটা। ওই ‘ডাব্লিউএসিসি’টা কষ্টকর হলেও বের করতে হবে আমাকে। কোম্পানিটা কতো কম টাকা আয় করলে তার শেয়ারহোল্ডারদের কাছে মুখ দেখাতে পারবেন সেটা জানা জরুরী। অন্ততঃ আমার জন্য। ওটার সর্বোচ্চ লিমিট বলে দেবো সাবমেরিন কোম্পানিকে। বটলনেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেবে।
চোখ মটকালেন চীফ। সবার আড়ালে। বোঝা গেলো ওই তথ্য পেতে হলে কাঠ খড় পোড়াতে হবে অনেক।
আবার, আমাদের কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন অপারেটর তৈরী করে নিতে পারেন তাদের ডিমান্ড ফোরকাস্টিং। সেটার হিসেবে নেগেটিভ ‘আরওসিই’, মানে ‘রিটার্ন অন ক্যাপিটাল এমপ্লয়েড’ ক্যালকুলেট করলে ডিমান্ড বাড়ানো সোজা। প্রথম বছরগুলোর ব্যাপারে বলছি আমি। চা খাওয়ানোর মতো হবে খানিকটা। যেতে হবে প্রোডাকশন কস্টের নিচে। স্বভাবতই রেভিনিউ কমে যাবে প্রথম দিকে। তবে সেই গ্যাপটা কমে আসবে ডিমান্ড বাড়ার কারণে। হয়তোবা রেভিনিউ উঠে আসবে পাঁচ বছরে। পাঁচ বছর পর আরেকটা বড় ধরনের প্রাইস কাট! এভাবেই চলতে থাকবে - ক্যাপাসিটি শেষ হওয়া পর্যন্ত। পুরো হয়ে গেলে আরেকটা কেবল নিয়ে আসবে কোম্পানি সাত বছরের মাথায়।
চমত্কার! মন্ত্রীর দরাজ গলা। আরেকটা সাবমেরিন কেবল সিস্টেম আসছে কবে?
মাইন্ড ইট! কেবল নয় – সিস্টেমের কথা বলছেন উনি!
Last updated
Was this helpful?