২.১. ইন্টারনেট চাবিয়ে বড় হওয়া

Never doubt that a small group of thoughtful, concerned citizens can change world. Indeed it is the only thing that ever has.

— Margaret Mead

ইন্টারনেট নিয়ে গল্প আছে হাজারো। আমার নিজেরই। টেকনোলজি নিয়ে বুঁদ হয়েছিলাম বছর বিশেক। তখন লিখতাম নিউজগ্রূপগুলোতে। ইউনিক্স নিয়ে সমস্যা? নাকি লিনাক্স? একটা পোস্ট দিলেই সমাধান আসতো হাজার মাইল দূর থেকে। এর হাতে খড়ি হয়েছে অফলাইনের যুগে। মনে কোন ফাইল নামাতে হলে কমান্ড পাঠাতাম পুশ-পুল এসএমএসের মতো। এফটিপি সার্ভারে লিস্টিং দেখতে পাঠাতে হতো একটা কমান্ড। আর ডাউনলোড করতে আরেকটা। আর ছিলো বুলেটিন বোর্ড। সিঙ্গাপুরে ডায়াল শুরু হলো বিরানব্বইতে। ছোটবেলায় ওয়েস্টার্ন বই পড়তে গিয়ে দেখলাম পিস্তলের নল চাবিয়ে বড় হয়েছে নায়ক। প্রায় সব নায়কই!

ছিয়ানব্বইতে দ্বায়িত্ব পেলাম সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করতে। কোন রকমে চালু করলাম ফ্রী-বিএসডি অপারেটিং সিষ্টেম, তারপর? হাজারো সমস্যা। এটা কাজ করলে তো ওটা কাজ করেনা। আজকের দিনের ওয়েব ফোরামের মতো সবেধন নীলমনি ছিলো নিউজফীড। হাজারো ইউনিভার্সিটির নিউজ সার্ভার পোস্টগুলো 'পোল' করতো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর। নিউজ ক্লায়েন্ট দিয়ে পোস্ট করতাম ওই দিনের সমস্যা। রাত না পোয়াতেই উত্তর এসে হাজির। সিম্পলি, গডসেন্ড! আজ হয়তোবা পড়েছি যে সমস্যায়, সেটা আমার জন্য ইউনিক হবার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। ফলে, সাহায্যের হাত আসতো সাত সাগর পাড়ি দিয়ে। না বুঝলে পোস্ট করতে বলতো জিনিসটার 'এরর লগ'। তিরানব্বইয়ে ফ্রিবিএসডি অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে হাতে খড়ি হলেও লিনাক্স আর সোলারিস মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলো অনেকটা বছর। ওই আঠারো বিশ বছর আগের আমার প্রশ্নগুলোর নিউজফীড এখনো দেখা যায় অনেক আর্কাইভ সাইটে। হাজারো প্রশ্ন[আমার নিজেরই] এখনো দেখতে পাই এখানে সেখানে! গুগল করে দেখবেন নাকি একবার?

বিটিআরসিতে আসার আগেই পড়েছিলাম টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি হ্যান্ডবুক। পড়েছিলাম লেখালিখির জন্য। জানতামও না ওখানে যেতে হবে একদিন। আইটিইউ’র স্ট্যাটিসটিকাল ডাটা দেবার ব্যাপারে বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ডাটার আনাগোনা হয়েছে আমার হাত দিয়ে এখানে এসেই খুঁজতে থাকলাম ফান্ডামেন্টাল কোর্স। অনলাইন হলে তো কেল্লাফতে। পড়ালেখা, তাও আবার – ইন দ্য কমফোর্ট জোন অফ আওয়ার হোম। আইটিইউ’র কোর্স খুঁজে পেলেও ভ্যাকান্সী কম। মাত্র দুজন। বের করলাম যোগসূত্র, আইটিইউতে। রাশান এক ভদ্রলোক। বেগ, বরো আর স্টিল (শেষটার পক্ষপাতি নই আমি, কারণ এর আগেই হয়ে যায় কাজ) মোডে শুরু করলাম ইমেইল যোগাযোগ। ইমেইলের মাধুর্যে না হলেও সিরিজ ইমেইল থেকে বাঁচতেই বোধহয় আমাদেরকে দেয়া শুরু করলো পাঁচটি করে ভ্যাকান্সী। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি পড়াশোনায় না করেনা কেউ। উল্টো, পয়সার ছাড় দেন সহৃদয় সিনিয়ররা। কাজ ডেলিভারি দিলে শেখাতে কি অসুবিধা? আর সেকারণেই কীবোর্ড ধরা।

এখন বের করতে হবে কি চায় দেশটা। মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। থাকতে হবে একটা মাস্টার প্ল্যান। চিন্হিত করতে হবে প্রয়োগের জায়গাটা। পড়েছি শতাধিক কেসস্টাডি। আর পড়েছি ওই দেশগুলোর ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড মাস্টার প্ল্যান। ধরুন, চল্লিশটার মতো। দেশগুলো অনেক আগে শুরু করাতে তাদের কনসেপ্টের রিভিউ পেপারটা পড়লেই বোঝা যাবে কোনটা কাজ করেছে আর করেনি কোনটা। এটা কোন রকেট সাইন্স নয়। দেখে শেখা। ঠেকে শেখা নয়। সেটাই ‘লেট স্টার্টার অ্যাডভান্টেজ।’ দেশগুলো তাদের ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেবার সাথে দাম কমানোর জন্য তৈরী করেছে হাজারো টুল। ওই টুলের মধ্যে আমি যেগুলোই ব্যবহার করেছি – ফলাফল পেয়েছি সাথে সাথে। একটা দুটো দেশে ভুল হতে পারে, তাই বলে ভুল করবে পঞ্চাশটা দেশ? সৃষ্টিকর্তা এমন কি তাদের দিয়েছেন – আমাদের দেননি? আমাদের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অনেক দেশের পুরো জনসংখ্যার অনেক অনেক বেশি। বিশাল পরীক্ষিত বাজার। বিশ্বাস হচ্ছে না? গ্লোবাল টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের সবচেয়ে লাভজনক ভেঞ্চার কিন্তু বাংলাদেশে। ওই পরীক্ষিত টুলগুলোকে পরিচিত করবো আপনাদের সাথে। এক এক করে।

Last updated

Was this helpful?