৫.৩. ইন্টারনেটের দাম নিচ্ছে কে?

When there’s a vacuum of public input, lobbyists usually fill it. But when there’s public input, the people usually win.

-― Morgan Carroll, Take Back Your Government: A Citizen’s Guide to Making Your Government Work For You

ডাটা নেটওয়ার্কের দামাদামি একটু ভিন্ন ধরনের। ভয়েস নেটওয়ার্কে এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে কল পাঠাতে হলে যাকে পাঠাচ্ছেন তাকে দিতে হয় একটা চার্জ। এটাকে বলে আন্তসংযোগ চার্জ। আমাদের দেশে এটা আঠারো পয়সা। আবার অনেক দেশে দুটো নেটওয়ার্কের ট্রাফিক কাছাকাছি হলে ‘সেন্ডার কীপস অল’ রেজীম ভালো। বিলিংয়ের ঝামেলা কম। একেকজন আরেক নেটওয়ার্কে কল পাঠিয়ে খালাস। আর গ্রাহকের পুরো বিলটা রেখে দেবে সে। ইন্টারনেটের ট্রাফিক বিলিং আরো মজার। ধরা যাক আপনি আইএসপি ‘ক’। আমি তাহলে ‘খ’। আমাদের সমান ট্রাফিক একে ওপরকে দিলে কাটাকাটি। কাউকে দিতে হবে না পয়সা। এটাকে বলে ফ্রি-সেটেলমেন্ট। এটা যেখানে হয় সেটাকে বলে ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ। আজ আমরা ট্রাফিক কিনছি দেশের বাইরে থেকে। কারণ, আমাদের দেশের বেশিরভাগ অনলাইন পত্রিকা হোস্ট করা দেশের বাইরে। ভেতরে হলে সাশ্রয়ী হতো অনেকটা।

তবে মুদ্রার ওপর পিঠটাও শুনতে হবে আপনাকে। যদি বন্ধ করে দেয় পত্রিকাটা কেউ? আবার, ইকোনমি অফ স্কেলের কারণে হোস্টিং খরচ কম – বাইরে। তবে শুরু করলেই কমে আসবে দাম। ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী হতে সময় লাগতো না অতো। ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জগুলো সাধারণত: চলে কোম্পানিগুলোর নিজেদের মধ্যে ‘মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ থেকে। কিছুটা ‘লুজলি বাউন্ডেড’। উদ্ভাবনা বেশী হয় ওখানে। লাইসেন্স হলে কমে আসে স্পৃহাটা। আমরা যতো বেশি কনটেন্ট বানাবো দেশে – ততো কমবে ইন্টারনেটের দাম। বাইরে থেকে তখন আইপি ট্রানজিট মানে ট্রাফিক কিনবে অন্যদেশ। এরকম হতে হতে এক সময় আমাদের আর ওদের ট্রাফিক হয়ে যাবে সমান। তখন হবে কাটাকাটি। মানে খরচ শুন্য।

গ্লোবাল ইন্টারনেট ফার্মগুলো ইন্টারনেটকে ‘এক্সপেরিয়েন্স’ বা অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখে। মানে তাদের সাইটে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা খারাপ হোক এটা চায়না সে মোটেই। তার কনটেন্ট সুদুর মার্কিন মুল্লুক থেকে আনতে গিয়ে লোডিং সময় বাড়াবার পক্ষপাতি নয় গুগল বা ফেইসবুক। সেটা চায় না অন্য ইন্টারনেট ফার্মগুলো। ক্লিক দিয়ে কনটেন্ট আসতে সময় নিলে ব্যবহারকারীরা আর আসতে চাইবে না সেই সাইটে। লক্ষ্য করেছেন কি লোডিং টাইম? মানে – যখন কনটেন্ট সার্ভারটা থাকে আপনার বিল্ডিংয়ে? কি ফুর্তিটাই না লাগে তখন? ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো চাচ্ছে ওই একই জিনিস। আসতে চাচ্ছে আপনার পাশের বিল্ডিংয়ে। অথবা আপনার শহরে। আর আমার আপনার মতোই ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোও চাচ্ছে দাম কমুক ইন্টারনেটের। প্রানপনে। যতো দাম কম সংযোগের – ততো আপটেক মানে ততো প্রসার। সেকারণে বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করছে সব ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো।

তবে আসতে চাইলেও পারছে না কিছু কিছু দেশের নীতিগত সিদ্ধান্তহীনতার কারণে। স্মার্ট কোম্পানিগুলো কিছু ‘ওয়ার্কারাউন্ড’ বের করে নিয়েছে এর মধ্যে। তাদের বহুল ব্যবহৃত কনটেন্টকে আবার দেশের বাইরে থেকে আনতে না হয় – সেজন্য ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোকে দিচ্ছে তাদের ক্যাশে ইঞ্জিন। প্রায় বিনামূল্যে। এটা এমন একটা যন্ত্র – যার মাধ্যমে কম কনটেন্ট আনতে হয় দেশের বাইরে থেকে। ইন্টারনেটের বিল কমানো আর আপনার ভালো ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্সের জন্য খরচ করছে বিস্তর। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো তো আক্ষরিক অর্থে বিনে পয়সায় আপনাকে ইন্টারনেট দিতে পারলে বাঁচে। দেখছেন না – হোয়াট’স অ্যাপের মতো অনেক অ্যাপ চালাতে যে ইন্টারনেট লাগে সেটাও ফ্রি দিচ্ছে আপনার মোবাইল অপারেটর। জিরো.ফেইসবুক বা জিরো.উইকিপেডিয়া ব্যবহার করেননি বিনামূল্যে?

Last updated

Was this helpful?