৫.৪. ইন্টারমিডিয়ারী লাইয়াবিলিটি প্রটেকশন
Kings will be tyrants from policy when subjects are rebels from principle.
-- Edmund Burke, Reflections on the Revolution in France
ফিরে আসি সমস্যায়। বছর তিনেক আগে ইউটিউব নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো গুগলের সাথে। এরপর মাঝে মধ্যে কথা হতো বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে। আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারগুলোতে কনটেন্ট সেন্সরশীপ নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কিছু রেগুলেশন নিয়ে ঘাটতে হচ্ছিলো। অনেকবারই। কনটেন্ট মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে থাকলে আমাদের নীতিমালা খাটে না, তবে সেটা অন্যদেশে থাকলে গুগল মানবে সেদেশের নীতিমালা। কথা চলছিলো টুইটার আর ফেইসবুকের সাথে। একই টাইমলাইনে। শুরু হয়েছিলো শর্টকোড নিয়ে। ওদের অফিসেও গিয়েছিলাম মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে। ছুটিতে থাকার সময়ে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে – বাংলাদেশে গুগল সার্ভিসগুলোর কনটেন্ট হোস্টিং করলে লাভ সবার। সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বাইরের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে কম। কম মানে যা তা কম নয় – অনেক কম। গ্রাহকদের ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স হবে পাশের বিল্ডিংয়ের সার্ভারের মতো। ক্লিক করার আগেই হাজির পেজ।
গুগল দেশে আসলে আসবে ফেইসবুক, আর আসবে হাজারো ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক। কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের কাজ হচ্ছে গ্রাহকদের কতো কাছ থেকে কতো বেশি কনটেন্ট দেয়া যায়। হাজারো পেটেণ্ট হয়েছে তাদের এই প্রযুক্তিতে। কোম্পানির হোম পেজ একটা। তবে সেটাকে জিয়োগ্রাফিকালি রেপ্লিকেট করা হচ্ছে এলাকা ভিত্তিক। ফলে বাংলাদেশ থেকে কেউ ফেইসবুক ক্লিক করলে সেটা মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে না পাঠিয়ে পাঠাবে আমাদের দেশের ভেতরের কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কে (সিডিএন)। দাম দিতে হবে না দুরের রাস্তার। ফেইসবুকে ক্লিক করলে আপনার আইএসপি পাঠিয়ে দেবে দেশের ভেতরের সিডিএনে। আইআইজি মানে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে পার হতে হবে না কখনই। দাম কমবে না মানে? সবার চিন্তা একটাই। কতো সহজে আর কতো তাড়াতাড়ি লোড হবে গ্রাহকদের পেজ। তাহলে গ্রাহক থাকবে ওদের পেজে বেশি সময়। কনটেন্ট দেশের ভেতরে থাকাতে ইন্টারনেটের দাম নেমে আসবে অর্ধেকে। সে হিসেব নিয়ে আসছি পরে।
আজকের টুল, ইন্টারমিডিয়ারী লাইয়াবিলিটি প্রটেকশন। মাফ করবেন। না পারতে – একটা আইনগত সঙ্গা ঝুলি থেকে বের করতে হচ্ছে আমাকে। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো চাওয়া একটাই। অন্যের কনটেন্টের জন্য কোর্ট কাচারী করো না আমাকে। প্রশ্ন হচ্ছে – ‘ইন্টারনেট ইন্টারমিডিয়ারী’ কারা? আর কনটেন্ট তৈরী করে কারা? ইন্টারনেটের কনটেন্ট তৈরী করছে সাধারণ মানুষ। ছবি আপনার। তুলেছেন আপনি। আপলোড করছেন আপনি। গুগল বা ফেইসবুক নয়। অথবা মিডিয়া কোম্পানিগুলো। পত্রিকা অফিস তৈরী করছে তাদের অনলাইন কনটেন্ট। তাহলে ‘ইন্টারমিডিয়ারী’ কারা? আইএসপি, সার্চ ইঞ্জিন আর সোশ্যাল মিডিয়া সার্ভিসটা হোস্ট করে তাদের প্ল্যাটফর্ম দিয়ে। অথবা পাইপ তৈরী করে দিয়ে। সোজা কথায় – যারা এনাবলার। বাজার বা রাস্তা ইজারা দেবার মতো। কে কি বেচবে সেটা তার ব্যাপার।
ঝামেলাটা অন্য জায়গায়। এদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকায় সরকারগুলো চাপ তৈরী করে এই ইন্টারনেট ইন্টারমিডিয়ারী’দের ওপর। কনটেন্ট সেন্সরশিপের জন্য যারা বলছেন – তারা কিন্তু বলছেন না ওই মানুষটাকে। যিনি আপলোড করেছেন বা লিখেছেন। দেশগুলো দোষ দিচ্ছে ইন্টারমিডিয়ারীদের। অথচ, সে জানেই না কে কি লিখেছে? আবার কোন কোন কনটেন্ট সেন্সরশিপে পড়বে এটার পরিস্কার নীতিমালা না থাকায় ‘ইন্টারমিডিয়ারী’রা দেশগুলোর চাপে মুছে ফেলে কনটেন্ট। তখুনি শুরু হয় আরেক গল্প। মানুষের ভাব প্রকাশের আইনগত অধিকার খর্ব হওয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচন্ড চাপে পড়ে তারা। মানে পুরোপুরি স্যান্ডুইচড! ফলে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো কোনো দেশে আসতে চাইলেও তারা কিছু ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায় আগে ভাগেই। অনেক টাকার ইনভেস্টমেন্ট করতে গেলে আপনিও চাইবেন তাই।
কনটেন্ট দেশে থাকলে সেই দেশের নীতিমালা মেনে চলবে সে। মানে ইন্টারমিডিয়ারীরা। যারা প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে মূলতঃ। কোন কনটেন্ট দেশের নীতিমালা বিরুদ্ধ হলে যার কনটেন্ট – দায়ী করতে হবে তাকে। কারণ, এটা ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট। সেটার জন্য আদেশ দিতে হবে স্বাধীন একটা লিগাল এনটিটি থেকে। অনেক দেশে দেখেছি – কোর্ট অর্ডার কাজ করে বেশি। তখন ইন্টারমিডিয়ারীরা মুছে ফেলবে নিয়ম মেনেই। যার কনটেন্ট সরানো হবে তাকেও তার মতামত দেবার সুযোগ দিতে হবে। মুছে ফেলার নির্দিস্ট একটা নীতিমালা চায় তারা। একেকজনের জন্য একেক আচরণ হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপদে পড়বে ওরা। তার আগেই যদি সে দেশ আইনগত ব্যবস্থা নেয়? দেশ যে তা নেবে না সেটার নিশ্চয়তা চায় তারা। আবার সেই কনটেন্টের মালিক যদি সুবিচার চেয়ে মামলা করে? মানে কেন তার কনটেন্ট মুছে ফেলা হলো?
Last updated
Was this helpful?