২.৩. প্রযুক্তিবিদ না অর্থনীতিবিদ?

No problem can be solved from the same level of consciousness that created it.

-- Albert Einstein

হাতে পড়লো ব্রডব্যান্ড কমিশনের একটা রিপোর্ট। ছোট কিন্তু মন ভালো করা রিপোর্ট। হাজার মানুষের প্রজ্ঞা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে দুহাজার দশের লিডারশিপ মানে নীতি নির্ধারণীদের জন্য এই ডিক্লারেশন। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের সাথে এর সংযুক্তিটাই বোঝানো হয়েছে প্রতিটা পাতায় পাতায়। প্রযুক্তির ‘প’ নেই এ রিপোর্টে। দারিদ্র্যতা, স্বাস্থ্যসেবা, সবার জন্য শিক্ষা, জেন্ডার ইকুয়ালিটি আর জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে ব্রডব্যান্ড কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটাই বলা আছে এখানে। বাংলাদেশকে পাল্টাতে হলে যে প্রজ্ঞা দরকার তার প্রায় সবটাই দেয়া আছে এখানে। বাকিটা হোমগ্রোন। ব্রডব্যান্ড কমিশনে কমিশনার হিসেবে আছেন পৃথিবীর হু’জ হুর সবাই – যারা পৃথিবীকে পাল্টাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সেই পঞ্চাশের লিস্টে আছেন বাংলাদেশ থেকে একজন।

মন ভালো হয়েছে আরেকটা কারণে। এক্সিকিউটিভ সামারি শুরু হয়েছে যে বাণী দিয়ে সেটা ব্যবহার করা হয়েছে উপরে। এই চরম সত্য কথাটার প্রতিফলন দেখি আমার কাজের পদে পদে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো সমস্যার সমাধানে আগের নলেজবেস খাটিয়ে সাময়িকভাবে উতরে গেলেও লম্বা দৌড়ে সেটা বিফলে পর্যবসিত হয়। রিসার্চে কোনো পয়সা খরচ না করে আগের বিদ্যায় অল্প সময়ে সমস্যার উত্ড়ানোর ব্যবস্থা করে বরং তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। ‘জিরো এরর সিন্ড্রোমে’ বিফলতার স্বাদ নিতে পারিনা বলে সফলতার কিভাবে আনতে হবে তাও জানি না আমরা। কোথায় যেনো পড়েছিলাম যে ব্যবস্যা আর নিজের জীবনে হোক – সমস্যা মানুষকে মারে না, বরং সেই সমস্যাকে অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করেই মরে।

ফিরে আসি আইনস্টাইনের কথায়। যেকোনো সমস্যার সমাধান কখনই যে লেভেলে সেটা তৈরী হয়েছে সেই একই লেভেলে সমাধান সম্ভব নয়। সমাধান চাইলে সমস্যাটা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে নিজেকে – পুরোপুরি। আর অন্য লেভেলে গেলে সেটার সমাধানের চেষ্টাটা ব্যর্থ হলেই জানা যাবে তার আন্টিডোট। সমস্যাটার মধ্যে সমাধান লুকিয়ে থাকে বলে সমস্যায় থাকা অবস্থায় সেটা দেখা যায় না। তার জন্য বের হয়ে আসতে হবে সমস্যার অঞ্চল থেকে। অবজার্ভারের ভুমিকায় আসতে হবে নিজেকে। তাহলেই দেখতে পারবেন তার সমাধান – নিরপেক্ষভাবে। সেই জিনিসটার সাথে ভালবাসায় থাকি বলে সেটা থেকে বিযুক্ত হতে পারি না। ফলে, সমস্যাটার আসল সমাধান পাওয়া যায় না সে মুহুর্তে। যে জাতি সেলফ ক্রিটিসিজম নিতে পারে তারা থাকবে সব সময় উপরে। পয়সার অপর পিঠ দেখতে চাইলেই দেখতে পারবেন, তার আগে নয়। সেলফ ক্রিটিসিজম মানে হচ্ছে নিজেকে অন্য লেভেলে বা পার্সপেক্টিভে নিয়ে বিচার করা। এনালজি নিয়ে আসি কি বলেন? গাছের লতাপাতার জন্য আপনি পুরো বনটাকে দেখতে পাচ্ছেন না বলেই আপনাকে বের হতে হবে গাছের নীচ হতে। গাছের উপরে উঠুন – অন্য গাছের সাথে তুলনা করতে পারবেন তখনি!

প্রযুক্তিবিদগণ নীতি নির্ধারণীতে থাকলে কিছু ভীতিকর কাজ হয় বলে আমি এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করি কিছুটা। নীতি নির্ধারণীতে অর্থনীতির ধারণাসম্পন্ন মানুষ দেশের ভালো করে বেশি। প্রযুক্তিবিদরা সমস্যার সমাধানে তার তৈরী করা সেই প্রসেসের ভালবাসায় পড়েন বলে সেটার সমাধান এড়িয়ে যেতে পারে তাদের চোখ। নিরপেক্ষ মানুষের কাছে সমস্যাটা ধরা পড়বে সহসায়। শিক্ষা সবার থাকা জরুরী, তবে প্রজ্ঞা নয়। উৎকর্ষতার শীর্ষে থাকা দেশগুলো চালান কজন? বেশি কি? আমাদের দরকার কতজন? প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারছেন যতোজন। আমার ধারনা, সমস্যা সমাধানে ভালবাসা কাজ করে না। ভালবাসার কাঙ্গাল হিসেবে আমরা খুবই আবেগপ্রবণ জাতি। সেটার প্রয়োগক্ষেত্র কিন্তু ভিন্ন।

আমি কোন জন?

প্রযুক্তিবিদ না অর্থনীতিবিদ?

Last updated

Was this helpful?