১.১. ইন্টারনেট নিয়ে কেন?

If I have seen further than others, it is by standing upon the shoulders of giants.

-- Isaac Newton

ইন্টারনেট নিয়ে কেন? হাজার বিষয় থাকতে ইন্টারনেট নিয়ে লাগলাম কেন?

মানুষের যা ভালো হয়েছে তার প্রায় সবকিছু এসেছে যুক্ত থাকার ফলে। আজ জ্ঞান উন্মুক্ত হলেও অনেক দেশ কব্জা করতে পারছে না নিজেদের সুবিধার খাতিরে। ব্যর্থতার দায়টা বর্তায় কানেক্টিভিটি না থাকার ওপর। আবার এদিকে যুক্ত থাকা দেশগুলো উপচে পড়ছে উদ্ভাবনার জোয়ারে। একেকটা উদ্ভাবনা তৈরি করছে হাজারো কর্মক্ষেত্র। দিচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তি। কথায় আছে বুদ্ধিমানরা শেখে দেখে। ঠেকে নয়। জার্মানী যে জিনিসটা ঠেকে শিখেছে বিশ বছরে - সেটার 'ল্যাগ' টাইম কমিয়ে নিয়ে আনছে অন্য দেশগুলো। জ্ঞানের 'ডিফিউশন[আমার কথায়, ঘুটা। হাজারো জ্ঞানের মাঝে নিজের জন্য প্রযোজ্য জ্ঞানটাকে বেছে নেবার প্রজ্ঞা রাখতে হবে দেশের নীতিনির্ধারকদের।]'। লেট-স্টার্টার অ্যাডভাণ্টেজ বলে অনেকে। দক্ষতার চুড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গেছে এশিয়ার অনেক দেশ। তাই বলে পিছিয়ে থাকতে চাই না আমরাও।

জ্ঞান কিন্তু রি-ইউজেবল। ব্রিটেনের প্রায় দুশো বছর লেগেছে। শুধু শিখতেই। শিল্প বিপ্লব থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিখেছে ব্রিটেন থেকে। তাদের লোক পাঠিয়ে। নোটবই ভরে নিয়ে আসতো অভিজ্ঞতার কথা। সেটা কাজে লাগিয়ে ওই ব্রিটেনের সাথে টক্কর দিয়েছে অনেক কম সময়ে। কমিয়ে নিয়ে এসেছে প্রায় একশো বছর। এশিয়ান দেশগুলো আরো বুদ্ধিমান। ইউরোপ আর অ্যামেরিকা থেকে শিখে সেটা কাজে লাগিয়েছে গত তিরিশ বছরে। এখন টক্কর দিচ্ছে সবার সাথে। হংকং, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর অন্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এগিয়েছে বেশি। পাশ্চাত্যে কোনটা কাজ করছে আর কোনটা করেনি সেটা জানলেই তো হলো! তার সাথে মেশাও 'লোকাল কন্ডিশন'।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেলেন জ্ঞান 'ক'। এদিকে সিংগাপুর দিলো জ্ঞান 'খ', ভিয়েতনাম থেকে নিয়ে এলেন 'গ', আমাদের স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে মিলিয়ে যেটা কাজে লাগে সেটাই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অনেকে এটাকে বলে 'বেস্ট প্র্যাক্টিসেস'। আমি বলি, ঘুটা, মানে জ্ঞানের ডিফিউশন। মনে আছে বৈজ্ঞানিক নিউটনের কথা? আমি যদি আজ বেশি দেখে থাকি অন্যদের চেয়ে, সেটা পেরেছি পূর্বপুরুষদের জ্ঞানের ভিত্তিতে। আজ আমি জানি ট্রানজিস্টর কি – আর কিভাবে কোটি ট্রানজিস্টর থাকে একটা চিপসেটে। নতুন করে ওই ট্রাংজিস্টর উদ্ভাবন না করে বরং এটা দিয়ে আর কী করা যায় সেটাই ভাববার বিষয়। আর তাই আগের জ্ঞান দিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা যায় সেটাই করছে নতুন ইমার্জিং দেশগুলো। এটাকে বলা হয় লিপ-ফ্রগিং।

আগের যুগে দেশগুলোর ভেতরে যাদের প্রাকৃতিক সম্পদ মানে খনিজ বা বিশাল যায়গা[ইংরেজিতে যাকে বলে 'ল্যান্ডমাস'] ছিলো, তাদেরকে ফেলা হতো ধনী দেশগুলোর ভেতর। মানুষ যুক্ত হবার পর থেকে দাড়িয়ে গেল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। যুক্ত হবার প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে এই ইন্টারনেট। ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনোমি চলছে এই যুক্ত হবার কারণে। মাথা বেঁচে খাচ্ছে সবাই। এখন বাসায় বসে বিক্রি করতে পারছেন আপনার জ্ঞান। চাকরি না করেও কোটি মানুষ চলছে এই 'কানেক্টিভিটি'র ওপর ভিত্তি করে। অনেক দেশ কিছুই উত্‍পাদন না করেও আয় করছে হাজার কোটি টাকা। ম্যানেজমেন্টের মতো জিনিস হয়ে গেছে কমোডিটি, সার্ভিস ইনডাস্ট্রিও চলে গেছে অন্য মাত্রায়। জ্ঞান ভিত্তিক সার্ভিস বেঁচে ট্রিলিয়ন ডলার আয় করছে গুগল ফেসবুকের মতো কোম্পানী। প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইন্টারনেট, মানে তাদের সুবিধায় নিয়ে গেছে এই কানেক্টিভিটিকে।

অনেকের এটাকে বলছেন নলেজ ইকোনমি। নলেজ ইকোনমি কিভাবে দেশগুলোকে পাল্টাচ্ছে তার ব্লু-প্রিন্ট ধরে নিয়ে কথা হবে সামনে। । জ্ঞান থাকলেই হবে না, ওটা থেকে প্রজ্ঞা নিয়ে কিভাবে টিকে থাকতে হবে সেটাই হবে দেশগুলোর বড় মাথাব্যথা। যারা শিখে গেছে আর যারা শেখেনি এখনো - কী হবে তাদের? লিপফ্রগিং। জ্ঞান আহরণের নতুন স্ট্রাটেজি। গরীব দেশগুলোর বেচে থাকার একমাত্র উপায়। সত্যি বলছি। ওটার একটা ছোট অংশ চলছে ইন্টারনেটে। গুগলের মতো কোম্পানিগুলো কিভাবে আয় করছে ট্রিলিয়ন ডলার? ঢুকবেন না ডিজিটাল ইকোনমিতে?

বোর করছি না তো?

আরেকটু ইতিহাস ঘাটি, কী বলেন? উঠতে চাচ্ছে সব দেশ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য গবেষণা হচ্ছে বিস্তর। 'কানেক্টেড' থাকার কোটি সুবিধা পাল্টে দিচ্ছে বুদ্ধিমান দেশগুলোকে। রিপোর্টেও আসছেও তাই। এটা একমাত্র ইন্ডাস্ট্রি যার ফলাফলে রয়েছে 'মাল্টিপ্লায়ার' মানে বহুমাত্রিক ইফেক্ট। বাড়বে জিডিপি, বাড়বে ব্যবস্যা বানিজ্য, বাড়বে পড়ালেখার সুযোগ। বাড়বে স্বাস্থ্যসেবার মান, তৈরী হবে ‘পাবলিক সেফটি’ ইকোসিস্টেম মানে রাষ্ট্র দেবে মানুষের সবধরনের নিরাপত্তা। এনার্জি আর পরিবহন খাতের দক্ষতা বাড়ছে যুক্ত কারণে। ফিরে আসি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশটা নিয়ে। সত্যিকারের ডাটা নিয়ে এনালাইসিস করে দেখা গেছে যুক্ত থাকলে জিডিপি বাড়ে নিশ্চিত। দেশের মানুষগুলোকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে চাইলে নেই এর কোন বিকল্প। যতো মানুষ ‘কানেক্টেড’, ততো বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। ততো আসবে ‘সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন’ মানুষের মধ্যে। সেটাই নিয়ে আসবে আসল স্বাধীনতা। এতো মানুষ আমাদের দেশে – তাও বাস করে এতো ছোট জায়গায় – যে কোন বিজনেস কেস সফল হতে বাধ্য। সেটার প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইন্টারনেট।

বলার অপেক্ষা রাখে না - যতো বেশি ইনফর্মেশন মানে তথ্য ছড়ায় ততো বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তৈরি হয়। আমি যদি নাই বা জানি আমার পাশের বাসার মানুষটা প্রতি সপ্তাহে মাছ নিয়ে আসেন তার গ্রামের বাড়ি থেকে, তাহলে উনার কাছ থেকে মাছ কিনবো কিভাবে?

টেলিডেনসিটি আর ইন্টারনেট পেনিট্রেশন খারাপ নয় আমাদের – মোবাইল পেনিট্রেশনও বেশ ভালো। তবে, খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে অসঙ্গতি পেলাম আমাদের ডেমোগ্রাফির আউটপুটে। মানুষের অসম্ভব ঘনত্ব, সমতল ভূমি, ক্যাপিটাল মেশিনারির উপর শূন্য শুল্ক, বিনামূল্যের স্পেকট্রাম আর মোবাইল পেনিট্রেশনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করলাম অন্য দেশের স্ট্যাটিসটিকাল ইনডিকেটরগুলো। আমাদের জিডিপির কাছাকাছি দেশগুলোর ইনডিকেটরগুলো জোগাড় করা হলো এসক্যাপ, আইটিইউ আর বিশ্বব্যাঙ্ক ছাড়াও আরো অনেক সোর্স থেকে। রেজাল্ট? আমাদের ডেমোগ্রাফি বলছে – আরো ভালো করতে পারতাম আমরা।

বাংলাদেশ ডিজার্ভস বেটার।

Last updated

Was this helpful?