২.২. ঘোড়া বন্ধু

Excellence is not a skill. It is an attitude.

-- Ralph Marston

কাডেট কলেজে পড়ার সময় বছর প্রতি ক্রস কান্ট্রি দৌড়ের কথা মনে পড়ে প্রায়ই। মধ্যম গ্রুপের যারা আমরা; প্রথম হবার বাসনা ছিলনা কখনোই যাদের, ক্রস কান্ট্রি রুট ব্রিফিং শুনতামও না ঠিক মতো। দাড়িয়ে থাকতাম পেছনে – দৌড় শুরু হবার অপেক্ষায়। ধারণা এমনটাই যে – প্রথম গ্রুপের যারা, তাদেরকে ফলো করলেই তো হলো ঠিক মতো। এ আর কি? যারা ‘ঘোড়া’ হিসেবে পরিচিত তাদেরকে নিয়েই এডজুটেন্টের যতো চিন্তা ভাবনা। রুট পরিচিতি বার বার হতো তাদেরই জন্য। তখন সমস্যা ছিলো না জীবন মরণের। আসতে পারলেই হলো। পেছনে আসার পর তিরস্কার – এতো আর নতুন কিছু নয়।

মিলিটারি একাডেমীতে এসে এর আইডিয়া গেলো পাল্টে। দৌড় আর বন্ধুত্ব এগোলো সমান তালে। মানে সমান দূরত্বের জন্য প্রতিনিয়ত সময় কমতে থাকলো দ্রুত – বন্ধুত্ব পাল্লা দিলো তার সাথে। বিভিন্ন দুরত্বের মাইল টেস্ট দেবার সময় নতুন ঘোড়া বন্ধুরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল বন্ধুদের সাহায্য করার পদ্ধতি বের করে ফেললো এর মধ্যে। প্রত্যক্ষ সাহায্য, যেমন পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে নেয়া নিয়ম বহির্ভূত হবার কারণে ঘোড়া বন্ধুদের বিশেষ করে পরীক্ষাগুলোর [মাইল টেস্ট] সময় নিতে হতো অতিরিক্ত কষ্ট। কারণ পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ না হতে পারলে বন্ধুগুলোকে হারিয়ে ফেলবো একাডেমী থেকে। দৌড় শুরু হবার পর থেকে ঘোড়া বন্ধুরা জীবনবাজি নিয়ে এমনভাবে টান দিতো, সেখানে আমরা মধ্যম গ্রুপ, ঘোড়া বন্ধুদের অনুশীলনের সময়ের কাছাকাছি গতি তুলে ফেলতাম। অবাক হয়ে যেতাম নিজেদেরই পারফরমেন্স দেখে। যারা থাকতো পেছনে, মধ্যম গ্রুপের সাথে তাদের দুরত্ব বাড়তে থাকলে পাগলের মতো দিশেহারা হয়ে গালিগালাজ করতে করতে সময় শেষের আগেই পার হয়ে যেত সাদা দাগ। বমি করতে করতে আমরা ঘোড়া বন্ধুদের মুন্ডুপাত করলেও তাদের প্রশ্রয়মাখা হাসিমুখ মনে পড়ে এখনো। ‘ঘোড়া’ বন্ধুদের কয়েকজন চলে গেছে না ফেরার দেশে।

উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করে আমাদের কাজ হয়না বলে আমরা আশেপাশের, আফ্রিকা মহাদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে আমাদের বেঞ্চমার্ক করে মানসিক তৃপ্তি নিয়ে থাকি। তবে বিশ বা তিরিশ বছর আগের গল্প দিয়ে যে কাজ হবে না সেটা টিভি আর খবরের কাগজ পড়লে কিছুটা আঁচ করা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড আমাদের অনেক নিচে থাকলেও তারা করে নিয়েছে ভাগ্যের পরিবর্তন। সবাই পরিবর্তন চায়, চাই না আমরা। ভয় পাই অবস্থান পরিবর্তনের। কিছু হলেই শুরু হয় ব্লেমগেম, দোষ দেই নীতি নির্ধারনী কর্তাব্যক্তিদের। চেয়ে থাকি তাদের দিকে। মনে হয় তারা খাইয়ে দেবেন আমাদের সবকিছু। আমাদের করার নেই কিছুই। অথচ যে কোনো পরিবর্তনের শুরু হয় নিজেকে পাল্টিয়ে। নিজের অভ্যাস পাল্টাতেও কষ্ট, ব্লেম ইট অন দ্য ওয়েদার! আফগানিস্তানের স্ট্যাটিসটিকাল ইনডিকেটর দেখলেও খাবেন ভিমড়ি। হুড়হুড় করে উঠে যাচ্ছে দেশটা ওপরে। তবে সরকারী বা ব্যবসার কাজে অথবা ভ্রমনে দেশের বাহিরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অথবা আফ্রিকা গেলে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে বেশ ভালো আন্দাজ পাওয়া যায়। সৃষ্টিকর্তা সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করার জন্য দিয়েছেন জ্ঞান – যা হচ্ছে হালের ইন্টারনেট। উন্নতদেশগুলোর ঠেকে শেখার জ্ঞানগুলো [ওরা সময় নিয়েছে অনেক] রপ্ত করতে পারলে তার জন্য সময় বাঁচিয়ে বিভাজন কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই ইন্টারনেটের গোড়া মানে সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে আফ্রিকার গল্প দেখলে উঠবে চোখ কপালে। আমরা আছি কোথায়? বেশি নয়, আমাদের সেই ঘোড়া বন্ধুদের মতো দশ বারোটা লোক পাল্টে দিচ্ছে আফ্রিকা। তাদের জীবন সঁপে দিয়েছেন উন্নত জীবনের সোপানে – বাকিদের জন্য। তারা ছিলেন না নীতিনির্ধারণীতে, কাজ করে দিচ্ছেন মানুষের তরে। নিচের ছবিটা তার প্রমান। আফ্রিকা এখন আলোকিত – অনেক অনেক বেশি!

কিছু ‘ঘোড়া বন্ধু’ প্রয়োজন – দেশের জন্য, হবেন নাকি একজন?

Last updated

Was this helpful?