৩.১. ইন্টারনেটে 'ব্রডব্যান্ড', মানে কি?

প্রথম মোডেমটা পেয়েছিলাম ৩০০ বিপিএসএর। বিশাল বড় জিনিস। ছোট একটা ইন্টার্নাল মোডেম চোখে পড়লো সৈয়দপুরে। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের পিসিতে। আমার প্রথম পোস্টিং ওখানে - উনিশশো বিরানব্বইয়ের ঘটনা। ওর জোড়াটা পাওয়া গেলো রংপুরের ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে। ডায়াল-আপ ইন্টারনেটেও অখুশী ছিলাম না মোটেও। বরং মোডেমের হ্যান্ডসেকিংয়ের আওয়াজ না শুনলে ঘুম হতো না পরের দিকে। শেষ ডায়াল-আপ মোডেমটা ছিলো সাইরাস লজিকের ৩৩ কেবিপিএসয়ের। বড় ডাউনলোডগুলো চলতো মাস জুড়ে। সে ছিলো আরেক জীবন।

আফতাব আইটি[আইএসপি] দুমাসের একটা অফার দিলো পুরোপুরি ফ্রী! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'নেটজিরো[পুরোপুরি ফ্রী সার্ভিস ছিলো ওটা। ব্রাউজারের নিচের অংশে অ্যাড খেতে খেতে ফ্রী ইন্টারনেট ব্যাপারটা ছিলো একেবারে স্বর্গীয়। ব্যবহারকারীদের থেকে টাকা না নিয়ে বিটুবি, মানে বিজনেস টু বিজনেস পয়সার আদান প্রদান শিখেছিলাম ওখানেই।]'র মতো খানিকটা, তবে সেটা শেখালো নতুন জিনিস। নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ইন্টারনেটকে এক্সপ্লোর করার ক্ষমতা। আগে অনলাইন ইন্টারনেট মানে মিনিট ধরে পয়সা। ইন্টারনেটে যেতে হতো ঠিকই, মাথার পেছনে টিক টিক শব্দটা কান পর্যন্ত পৌছাতো ঠিকই। অনেকে ইন্টারনেট খুলে ইউডোরা[দুনিয়ার সবার প্রিয় মেইল ক্লায়েন্ট হিসেবে নাম করে নব্বইয়ের দিকে। ব্যবহারকারীর সব 'উইশলিস্ট' ছিলো ওখানে।]'র 'সেন্ড এণ্ড রিসিভ' চেপেই ক্ষান্ত দিতো ওই দিনের ইন্টারনেটের ব্যবহার। ধারনা করি, ওই দুমাস তিন ভাইবোন মিলে আটকে রেখেছিলাম আফতাব আইটি'র একটা মোডেমপোর্ট। পরের দিকে লাইন কেটে যেতো ঘণ্টা ক্ষণিক পর পর, ডায়ালার স্ক্রিপ্ট সেটাকে 'কানেক্ট' করতো পরের মূহুর্তে। ইন্টারনেটকে দেখে নিয়েছিলাম আমরা তিন ভাই বোন - ওই সময়ে। ধন্যবাদ আফতাব আইটিকে।

তবে সেটা ছিলো ন্যারো ব্যান্ড। আস্তে আস্তে ভারি হতে থাকলো ইন্টারনেট। ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস, ভিডিও আর রীচ মিডিয়ায় ভরে যেতে লাগলো ইন্টারনেট। হাজারো পৃষ্ঠার বই পড়তে যে সময় লাগছিল সেটাকে কমিয়ে নিয়ে আসলো ঘণ্টা খানিকের ভিডিও লেকচার। ডাউনলোড করে দেখা, সে সময় নেই মানুষের। দরকার পড়লো মোটা পাইপের। দরকার পড়লো ব্রডব্যান্ডের। মানুষ বাসায় বসে কথা বলতে চাইলো আরেকজনের সাথে, ভিডিও সহ। সিডি আর ডিভিডি ভাড়া করে দোকান থেকে নিয়ে এনে দেখার মুড চলে যাচ্ছে অনেকের। হাজারো কাজ বেড়েছে মানুষের। পাল্লা দিচ্ছে টেকনোলজি। সঙ্গে সঙ্গে। বসে আছি বাসায়, দেখতে মন চাইলো একটা মুভি। সেকেন্ডের মধ্যে কিনে দেখার মতো সুবিধা দিচ্ছে প্রযুক্তি। ওই মুভিটা বাসায় আনতে লাগছে ব্রডব্যান্ড। অফিসের কাজ হচ্ছে অনেক 'রিমোট লোকেশন[আমার বন্ধু তার রিপোর্টিং বসকে সামনাসামনি দেখেছিলো ছয়মাস পর।]' থেকে। তাদেরও কাজ চলছে ওই ব্রডব্যান্ডের ওপর দিয়ে।

কাকে বলছে ব্রডব্যান্ড? সনাতন পদ্ধতিতে হাই স্পীড ডাটা সংযোগের নূন্যতম একটা গতিকেই বলা হচ্ছে ব্রডব্যান্ড। সেটাই কিন্তু শুনে আসছি অনেক বছর ধরে। বিটিআরসিতে থাকার সময় আমার সাক্ষরে ব্রডব্যান্ড ডেফিনেশনে কিছুদিন আগেও এটা বলা হয়েছে নূন্যতম এক মেগাবাইট মানে ব্রডব্যান্ড। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশন ইউনিয়নের আই.১১৩ রেকমেন্ডেশনে প্রাইমারী রেট আইএসডিএন[প্রথম দিকের ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ছিলো এই আইএসডি] মানে ১.৫ - ২ মেগাবিটস/সেকেন্ডকে বলা হচ্ছে ব্রডব্যান্ড। এদিকে ওইসিডি, আইটিইউ, আংকটাড ওটাকে কিছুটা পাল্টেছে। তারা বলছে নূন্যতম ২৫৬ কেবিপিএসএর গতি। তবে যে যাই বলুক, ভেতরের গল্প অন্যখানে। কারণ কার কতো গতি দরকার সেটা নির্ভর করছে সেই ব্যবহারকারীর এজেন্সি, দেশ আর সময়ের ওপর। কি কাজে ব্যবহার করছেন সেটার ওপর নির্ভর করছে আপনার গতি। সেখানে ব্রডব্যান্ড ডেফিনেশন কি বলছে সেটা হারিয়ে যাচ্ছে কালের বিবর্তনে।

বাসায় বসে আপনি ইউটিউবে হাইডেফিনেশন ভিডিও দেখছেন না পলিকম[ভিডিও কণফারেন্স করার জন্য ডেডিকেটেড হার্ডওয়ার প্ল্যাটফর্ম।] অথবা স্কাইপে ভিডিও কণফারেন্স করছেন সেটা নির্ভর করছে আপনার দরকারের ওপর। সেটার জন্য ২৫৬ কেবিপিএস না ২ মেগাবিটস যা লাগবে সেটা তো নিতে হবে আপনাকে। তাহলে 'সঙ্গায়িত' করার এই প্রথা কাজে আসছে আপনার? গতিটা আসলে নির্ভর করছে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আর প্রয়োজনের ওপর। এছাড়া আজ যেটাকে দু মেগাবিটস বলছেন কালকে সেটা পাল্টাতে বাধ্য। আপনার অ্যাপ্লিকেশনই চাইবে নতুন নতুন গতির মাত্রা। ফলে, কিছুদিন পর পর পাল্টাতে হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ডেফিনেশন। দরকারও বাড়ছে মানুষের। নাহলে আজ থ্রীজি, কাল এলটিই নেটওয়ার্ক আসছেই বা কেন, বলুনতো? আর ওই গতি আপনার 'এন্ড ইউজার' মানে সব শেষ গ্রাহকটা পাচ্ছেন কী না সেটা মাপার উপায় সমস্যা বটে। বরং দেখা যায় সরকারের দেয়া নূন্যতম গতি পার করেছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা অনেক আগেই।

এখন অনেক দেশই [ওইসিডি সহ] বের হয়ে আসছে ওই গতির বলয় থেকে। গতি দিয়ে সঙ্গায়িত না করে ওই সংযোগটা দিয়ে কি করা যাচ্ছে আর কি করা যাচ্ছে না সেটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। নিলেন বড় গতির পাইপ, ইউটিউব দেখতে গিয়ে শুরু হলো বাফারিং, হলো না তো আপনার কাজ। মানে নামে ব্রডব্যান্ড - কাজে না!

Last updated

Was this helpful?