১.৩. কাদের জন্য?
ধন্যবাদ আপনাকে। বইটা হাতে নেবার জন্য। অনেক সম্ভাবনার দেশ হয়েও আমরা কেন জানি নিজেদের ভাগ্য পাল্টাতে পারছি না। দেশগুলোর প্যাটার্ন এনালাইসিস করলে দেখা যায় উদ্ভাবনায় ভালো দেশগুলো উঠছে ওপরে। সেই উদ্ভাবনার প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইন্টারনেট। আর ওই ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দেবার প্রচেষ্টার অনেকগুলো ধাপের একটা বইটা।
আমাদের দেশের জন্য ম্যানুয়াল না লিখে একটা ডক্টরাল ডিগ্রী নেয়া বরং সহজ। আর সেটাই নিয়ে আনছি সামনে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরের দেশ না হলেও এর কিছু ‘নিজস্বতা’ আছে বলে অনেক ফর্মুলা কাজ করে না। আবার এক রান্না ঘরে বেশী রাঁধুনী থাকলেও রেসিপির আধিক্য বাড়িয়ে দেয় সমস্যা। তাই বলে উঠবো না আমরা? হাতের বিগ ডাটা বলছে অন্য কথা।
শুরুতেই বলেছি, বইগুলো লেখা শুরু করি কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)তে আসি দুহাজার সাত সালে। বছর ঘুরতেই এই সংস্থাটির জন্য একটা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ধরে রাখার জন্য দেশ বিদেশের রেগুলেটরী প্রশিক্ষণ, মিটিং, সেমিনারের বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন আর হোয়াইট পেপার সংগ্রহ শুরু করি। ইমেইল আর ফোন করে চাইলেই অনুষ্ঠান আয়োজকরা পাঠিয়ে দেন। বেশিরভাগ জিনিস অনলাইনে থাকতে সেটার লিংক আর পাসওয়ার্ড পাঠিয়ে দেয়াতে কাজ অনেক সহজ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় সাত বছরের মাথায় ডকুমেন্টেশনের সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় প্রায় পনেরো হাজারে।
বিটিআরসির এখনকার জনবলের বেশিরভাগ এসেছেন দুহাজার সাতের পর। নলেজ ম্যানেজমেন্টের একটা বড় শর্ত হচ্ছে গিয়ে সংস্থার একটা স্মৃতি তৈরী করা। না হয় যোগাড় করলাম হাজারো তথ্য, ওটাকে আমার এই লম্বা সময়ের অভিজ্ঞতার সাথে কিভাবে যাবে সে ধারনা থেকে একটা ব্লগ শুরু করা। নতুন যারা এসেছেন তারা হটাত্ করেই তো বুঝবেন না পুরনোদের মতো। আর সেকারণে ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসের’ দেশীয় করণের প্রচেষ্টা এসেছে এই বইটাতে।
বইটা প্রথমদিকে শুধুমাত্র রেগুলেটরের জন্য লিখলেও পরে মত পাল্টাতে বাধ্য হই। ব্লগে টেলিযোগাযোগ সাংবাদিক আর অন্যান্য পেশার মানুষের বেশ সাড়া পাই। উন্নতদেশগুলোতে নিজ দেশের নীতিমালা লিখছেন সাধারণ মানুষ। আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের নীতিমালা লেখার জন্য বই লিখছি পাশাপাশি।
উন্নতদেশগুলোর সফলতা আমাদের দেশগুলোকে চাপে ফেলছে একঅর্থে। ওরা পারলে আমরা পারছি না কেন? আর এখন তো ইন্টারনেট "জেনারেল পারপাজ টেকনোলজি", তৈরি করা হয়েছে সবার জন্য। আর সেটাই নিয়ে আসছে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভিন্নতার কারণে কাজও করবে না একধরনের ফর্মুলা। আর সেকারণে বইটা তৈরি করা হয়েছে আমাদের দেশের জন্য। ধারণা করছি, এগুলো কাজ করবে বাংলাদেশে।
তবে যে যাই বলুক, ইন্টারনেটের বেসিক পলিসি স্ট্রাকচার কিন্তু প্রায় এক। এটাকে অনেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে। ওটা আবার কাজও করছে সব যায়গায়। প্রথমে লাগবে পয়সা, সেটা আসবে কোথা থেকে? প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট আবহাওয়া কেমন? প্রণোদনা আছে কি না? সম্পদ ছাড়া দেশগুলোর জন্য এটা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের মতো দেশগুলো সফল দেশগুলোকে সার্ভে করলেই বোঝার কথা - কোন ফর্মুলা কাজ করেছে আর কোনটা করেনি। আমার 'কানেক্টিং দ্য ডটসে'র ধারনা থেকে দিব্যি বলতে পারি কোনগুলো কাজ করবে বাংলাদেশে।
তিন ভাগেই চালায় নীতিমালা আর তার সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলো - সবদেশেই। যখন কিছুই নেই তখনকার প্রচারমূলক কার্যক্রম - প্রমোশোনাল আকটিভিটিজ। প্রবৃদ্ধির শুরুতে বিভিন্ন বাজারের প্রতিযোগিতা দেখভাল করতে পারে না আমাদের মতো দেশগুলো। ছোট কোম্পানীগুলো রুগ্ন হতে থাকে আরো বেশি। 'রেগুলেটরী ক্যাপচার' নিয়ে আলাপ থাকছে ভেতরে। আর বাজার 'ম্যাচ্যিয়ুর' মানে পরিপক্কতা পেলে সেটাকে সার্বজনীন করার ব্যবস্থা নিতে হবে রেগুলেটরকে। সবার জন্য শিক্ষার মতো সবার জন্য অ্যাক্সেস। সেটার 'মাধ্যম' নির্ভর করবে মানুষের ডিজিটাল লিটারেসির ওপর।
Last updated
Was this helpful?