৩.৫. আর কি সুবিধা?

The nation will find it very hard to look up to the leaders who are keeping their ears to the ground.

—Sir Winston Churchill

ব্রডব্যান্ড কি না দিচ্ছে? ইন্টারনেটের কথা বলছি আর কি। পড়ছিলাম দুহাজার সাতের ‘ইয়ানসেনের’ রিপোর্টটা। আস্তে আস্তে যোগ হতে থাকলো জেনী, বেজলী, ফিলিপা আর টিম কেলীর অনেকগুলো রিপোর্ট। বিশ্বব্যাঙ্কের ‘বিল্ডিং ব্রডব্যান্ড’ বইটা বেশ কিছু মিলিয়ে নিয়ে এসেছে কয়েকটা যায়গায়। সামাজিকভাবে ইন্টারনেটের সুবিধা কোথায় কোথায়? ফার্স্ট থিং ফার্স্ট, এটা যুক্ত করছে আমাদের সবাইকে। এই যে পড়ে আছি আমি সুদূর ‘কোতে দে ভোয়া’তে (সরকারীভাবে তারা মানে না ‘আইভরি কোস্ট’ নামটা), যুক্ত আছি কিন্তু এই ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। আমার সব ‘অ্যাপ’ জীবিত আছে ওই পাইপটার জন্য।

যোগাযোগে কোন সুযোগ নিতে নেই। আরেকটা ভি-স্যাট আছে অন্য যায়গায়। ডিজাস্টার রিকভারি সাইটে। ওপরের দিকের মাইক্রোওয়েভ লিংকটার কথা বাদ দিয়েছি নাকি?

ছবি দেবো নাকি একটা? এছাড়া, যুক্ত করছে ব্যবসাগুলোকে যারা পয়সা আনছে দেশে – তৈরি করছে কর্মক্ষেত্র। সবচেয়ে বড় জিনিসটা বলিনি এখনো। এটা যুক্ত করছে মানুষকে তাদের সরকারের সাথে। সরকারের সব সার্ভিসের সাথে। প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ‘সুশাসন’। ‘গুড গভার্নেন্স’ যাকে বলি আমরা। সরকারের কর্মক্ষমতা চেখে দেখতে পারছি আমরা। জবাবদিহিতা বাড়ছে সরকার আর রাজনীতিবিদদের। আমার ‘জবাবদিহিতা’র ওয়ার্ক-ফ্লো তৈরি করেছিলাম বিটিআরসিতে থাকতে। এর ওপরে তৈরি হয় দেশের প্রবৃদ্ধি। ইংরেজিতে ‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’ও বলতে শুনেছি অনেক যায়গায়। মানে মানবসম্পদের মেধাভিত্তিক – অর্থনৈতিক যাই বলেন সবকিছুর প্রবৃদ্ধি।

আজ ফেসবুকেই বিক্রি হচ্ছে অনেককিছু। বই, টি-শার্ট, জামা কাপড় – আরো কতো কি? গ্রাহক নিজে কথা বলছেন ক্রেতার সাথে। ভালো মন্দ যাই বলছেন না কেন সেটা কিন্তু ছড়াচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। ‘ইবে’ থেকে পুরোনো কিছু সিডি কিনেছিলাম অনেকদিন আগে। এর মধ্যে কিভাবে একটার সিডি’র কভার গিয়েছিলো ফেটে। শিপিংয়ের সময় হতেই পারে সেটা। কমেন্ট না করে ইমেইলে এমনিতে জানিয়েছিলাম বিক্রেতাকে। তবে সেটা পাল্টে দিতে বলিনি ইমেইলে। পরের সপ্তাহে নতুন কভার এসে হাজির। বিক্রেতাকে ভালো ‘রেটিং’ না দিয়ে উপায় আছে আমার?

‘ইনফর্মেশন ইজ পাওয়ার’। আজ আমরা জানি কোথায় কি আছে – এই ইন্টারনেটের বদৌলতে। তথ্য যতো ছড়াবে, ইকোনোমিক অ্যাক্টিভিটি বাড়বে জ্যামিতিক হারে। ফালতু জিনিস গছিয়ে দিয়ে টাকা মেরে দেবার দিন গেছে চলে। ফলে, কোম্পানীগুলোর মধ্যে বাড়ছে সুশাসন। বাড়ছে ব্যবসা। কোম্পানীগুলো ‘সৌর্সিং’ করছে দুনিয়াব্যাপী। এক ল্যাপটপ আয়ারল্যান্ডে সংযোজন করলে তার পার্টস আসছে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের ফ্যাক্টরি থেকে। ইনভেন্টরি আপডেট হচ্ছে সেকেন্ডে। ইন্টারনেটের ওপর দিয়ে। মানুষ বাজার করছে বাসায় বসে। দেবে খারাপ জিনিস? ক্রেতা ওমুখো হবে না আর। বিক্রেতাও জানে সেটা। কোম্পানীর ফীডব্যাক পাতা না থাকলেও অসুবিধা নেই তাতে। রয়েছে গ্রাহকদের তৈরি পাতা। কোম্পানীর ঠিকমতো কাজ না করলে আছে খবর।

তথ্যের ‘প্রাচুর্যতা’ মুক্ত করে দিয়েছে মানুষকে। মাসলো’র থিওরিতে গেলাম না আর। মুক্তবাজার অর্থনীতি সুযোগ নিচ্ছে এই ইন্টারনেটের ওপর থেকে। এখন অফিস আর তাদের ফ্যাক্টরিগুলো থাকে দুনিয়া জুড়ে। বিলিয়ন বিটস যাচ্ছে শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ওপর। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ‘আইফোনে’র ডিজাইন যাচ্ছে স্যান-ফ্রান্সিস্কো থেকে। কোরিয়া থেকে আসছে চিপসেট, গরিলা গ্লাস আসছে সিংগাপুর আর থাইল্যান্ড থেকে। মেমরি আসছে হয়তো তাইওয়ান থেকে। উদাহরণ হিসেবে বলছি আরকি। চীনের ফক্সকণ কোম্পানীতে হচ্ছে আরো অনেককিছু। প্রোটোটাইপ তৈরি হচ্ছে আরেক যায়গায়। পুরো দুনিয়া সুবিধা নিচ্ছে ইন্টারনেটের।

৬২১.

বোয়িংয়ের ‘ড্রিমলাইনার’ প্লেনটা তৈরি হয়েছে কয়টা দেশ মিলে? দেশগুলো টাকার কথা চিন্তা করছে না আর। সবার একটাই কথা। ছড়িয়ে দাও ইন্টারনেট, যুক্ত করো সবাইকে – ব্রডব্যান্ডে। পয়সা যা লাগে ঢাল তো আগে। সরকারী সার্ভিস পৌঁছে দাও মানুষের দোরগোড়ায়। সহজ করে দাও সরকারী ইন্টারফেসকে। সময় বাঁচিয়ে দাও মানুষের। তাহলেই বাড়বে মানুষের প্রোডাক্টিভিটি। মানুষের প্রোডাক্টিভিটি বাড়া মানে হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। পুরো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসটাকে নিয়ে আসতে হবে অনলাইনে অথবা মোবাইলে। টাকাকে ‘রোল’ করানোর জন্য যতো ধরনের ‘অটোমেশন’ দরকার, সেটা কিন্তু তৈরি আছে ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে। একমাত্র ইন্টারনেটই পারে বিলিয়ন ডলার ‘রোল’ করতে – সেকেন্ডে। যতো বেশি ‘রোল’ – ততো বেশি ভ্যালু অ্যাডিশন। সব যায়গায়। পয়সা যাবে সবার পকেটে। আর, সব ইনফ্রাস্ট্রাক্চার তৈরি করতে হবে সরকারকে – এটা লেখা আছে কোথায়?

ইন্টারনেট আসার পর হেল্থকেয়ার ইনডাস্ট্রি কোথায় গেছে সেটা আর বলতে! টেলিমেডিসিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের ডাক্তার দেখছে অজ পাড়াগাঁয়ের মানুষটাকে। ডায়াগনষ্টিক টেস্ট হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। এ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে পারে দেশের সরকারগুলো। প্রতিটা যায়গায় দামী মেডিক্যাল ‘রিসোর্স’ না কিনে সেটার সুবিধা বিস্তৃত করতে পারে ওই দূরদুরান্তের হাসপাতালগুলোতে – অনলাইনে। মানুষকে ভিড় করতে হতো না ঢাকায়। ইলেকট্রনিক ভোটিং আর জমির রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে আনতে পারলে তো কেল্লা ফতে। দেশের মানুষ বেঁচে যেতো লক্ষ লক্ষ ফৌজদারী মামলা থেকে। বিচার ব্যবস্থা অনলাইনে নিয়ে এলে মানুষের ভোগান্তি কমে আসতো হাজারগুণে। প্রতিবার ঢাকায় আসাটা বন্ধ হতো শুরুতেই। জমির অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে আশেপাশের দেশগুলোর অগ্রগতি ইর্ষণীয়।

দুহাজার ছয়ে চমত্কার একটা কাজ করেছিলো পিউ রিসার্চ সেন্টার। ওরা দেখিয়েছিলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অন্যদের থেকে সাহায্য পায় অনেক বেশি। আপনি বলবেন এটার জন্য রিসার্চ লাগে নাকি? আসলেই তো! ইউনিক্স ‘সকেট প্রোগ্রামিং’ শিখতেই পারতাম না এই ইন্টারনেট না হলে। ভুল স্ক্রিপ্ট লিখে নিউজগ্রুপে পোস্ট দিলেই ঠিক করে দিতো সারা দুনিয়ার লোক। বকা যে খাইনি তাও নয় – ওই জ্ঞানের কাছে ও ধরনের ‘ফ্লেমিং’ তুচ্ছ। তাও আবার বোধকরি ‘ক্রস-পোস্টিং’য়ের জন্য। সোলারিস, ফ্রীবিএসডি আর লিনাক্স নিয়ে আমার হাজারো পোস্ট ঘুরছে ইন্টারনেটে – এখনো। এখন মানুষ সবচেয়ে বেশি সাহায্য পায় ‘স্বাস্থ্য’ বিষয়ক ব্যাপারে। এরপর আসে চাকরির ব্যাপারটা। ‘লিংকডইন’ প্রোফাইল দেখে চাকুরীর অফার পাচ্ছি না বলাটা ভুল হবে। বিডিজবস থেকে প্লেসমেন্ট হচ্ছে হাজারো লোকের। ‘মন্সটার ইঙ্ক’ও করছে ভালো। এখনকার ছোট বড় সবধরনের ইনভেস্টমেন্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইন্টারনেটের ওপর। স্টক এক্সচেঞ্জ চলছে কিসের ওপর?

ইন্টারনেট হয়ে গেছে অক্সিজেনের মতো – না থাকলে সব যায় আটকে। আমার কথা নয়, জিজ্ঞাসা করুন নিজেকে। আর থাকবে না কেন? জিজ্ঞাসা করুন আমাকে। সামরিক বাহিনীর কম্যুনিকেশনের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে – ডুপ্লিকেশন। নো কম্যুনিকেশন উইথআউট অল্টারনেটিভ চ্যানেল। পিরিয়ড।

Last updated

Was this helpful?