২.৪. বটম অফ দ্য পিরামিড
I am often accused of interfering in the private lives of citizens. Yes, if I did not, had I not done that, we wouldn’t be here today. And I say without the slightest remorse, that we wouldn’t be here, we would not have made economic progress, if we had not intervened on very personal matters – who your neighbour is, how you live, the noise you make, how you spit, or what language you use. We decide what is right. Never mind what the people think.
-― Lee Kuan Yew
শহরে বসে ইন্টারনেট নিয়ে আলাপ করা যায় হাজারো ঘণ্টা, তবে সেটার গ্রোথ দেখতে হলে যেতে হবে বাইরে। সামরিক বাহিনীতে চাকরির সুবাদে চষে বেড়াতে হয় দেশের আনাচে কানাচে। আর তখনি চোখে পড়ে ইন্টারনেট সার্ভিসের দূরবস্থা। চেষ্টা করছে মোবাইল অপারেটররা। আবার, তাদের দোষ দিয়ে পার পাবেন না নীতিনির্ধারকেরা। দরকার আরো স্পেকট্রাম। সেটা আছেও অফুরন্ত আমাদের। দরকার দক্ষ ব্যবস্থাপনা। যুক্ত হতে পড়ছে না সবাই। এই বৈষম্যটার ফারাক বাড়ছে ডিজিটাল ডিভাইডে। জ্ঞানের ভাণ্ডার এখনো ধরে আছে শহরের মানুষেরা। এটা কী চেয়েছিল দেশ?
আমার পর্যবেক্ষনটা একটু ভিন্ন। আজ যাদের ইর্ষণীয় অর্থনৈতিক আর সামাজিক প্রবৃদ্ধি, তাদের ইতিহাসটা ঘাটলে পরিষ্কার হবে সবকিছু। ব্রডব্যান্ড প্ল্যান নয়, একটা 'ওয়েল ডিফাইণ্ড' দর্শন ছিল এই প্রবৃদ্ধির পেছনে। আর দর্শনটাকে বাস্তব করতে গিয়ে টূল হিসেবে ব্যবহার করছে ব্রডব্যান্ড প্ল্যান। তারা চেয়েছে সামাজিক সক্ষমতা, আর সেটার জন্য এসেছে যুক্ত থাকার প্রয়োজনীয়তা। আর সেটাই ইন্টারনেট। ফোনে কথা বলতে গেলে চাপতে হবে ডিজিট, সেটা কিন্তু উচ্চমার্গের প্রযুক্তি নয়। আর সেকারণে, তথ্যপ্রযুক্তির বাহক ইন্টারনেট হচ্ছে 'জেনারেল পার্পাজ টেকনোলজি' (জিপিটি)। এই 'জিপিটি' ছড়িয়ে আছে মানুষের জীবনের প্রতিদিনের কাজের সাথে। পরীক্ষার ফী দিতে হচ্ছে ফোন থেকে। 'দেবো না ফী মোবাইল থেকে' - বললে কী পার পাবেন আপনি? 'জিপিটি'কে জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে সবাই।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শুরুতেই লাগবে সোশ্যাল ইনক্লুসিভনেস। মনে নিয়ে চল সবাইকে। একসাথে। 'জেনারেল পার্পাজ টেকনোলজি' দিয়ে এটা সম্ভব তাড়াতাড়ি। মানুষের ভালো চাইলে সম্ভব সবই। সরকারী সার্ভিসগুলো পৌছিয়ে দাও মানুষের দোরগোড়ায়। এই 'জিপিটি' দিয়েই। সবার জন্য শিক্ষার মতো এটাকেও 'ইউনিভার্সালাইজড' করা হোক সবার জন্য। আর সেকারণে এটাকে নিয়ে যাবো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে।
ফিরে আসি যুক্ত হবার প্রারম্ভিক ধারনা থেকে। টেলিযোগাযোগে ইউনিভার্সাল সার্ভিস ব্যাপারটা বেশ পুরোনো। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় ব্যাপারটা আছে। প্রথমে বলা হয় যুক্ত করতে হবে সবাইকে। সবাইকে মনে পুরো জনগোষ্ঠীকে। বেসিক টেলিযোগাযোগ সার্ভিসে। ধনী, গরীব, যারা কিনতে পারে - যারা পারে না, যারা গ্রামে বা শহরে থাকে, তাদের পয়সা আছে কী নেই - সবাইকে যুক্ত করতে হবে বেসিক টেলিযোগাযোগ সার্ভিসে। আর এটার নামই ইউনিভার্সাল অ্যাক্সেস। পয়সা আজ না দিতে পারলে কাল দিবে। না হলে সেটা আসবে ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অবলীগেশন ফান্ড [এটা চমত্কার একটা জিনিস। সরকারের পয়সা লাগে না এটাতে। সামনে থাকছে] থেকে।
পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। এই তিনশো কোটি মানুষের মধ্যে বাংলাদেশে যারা আছে তাদের জন্য কিছু করা করা হয়েছে কিনা? চলে আসলো আবার ‘বটম অফ দ্য পিরামিডের’ কথা। পিরামিডের সবচেয়ে নিচের মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনে কিছু করা হয়েছে কিনা? যাদের সামান্য মোবাইল ফোন কেনার সামর্থ্য হয়নি এখনো। সস্তা কল রেট বলে লাভ হচ্ছে না কারণ তার তো নেই ফোন। তার মানে হচ্ছে এক্সেস ইস্যু। যোগাযোগ করার যন্ত্রটাই নেই। পল্লীফোনে কিছুটা সমস্যা মিটলেও হাতের কাছে ফোন না থাকার কারণে ইকোনমিক একটিভিটি কমতে বাধ্য। ভিক্ষুক আমি, কাল হাট বসছে কোথায় – কোথায় জনবসতি বেশি, তার তথ্য আরেক ভিক্ষুক বন্ধুর কাছ থেকে পেলেই তো আয় বাড়বে আমার, আর একটু আয় বাড়লেই ভিক্ষা ব্যবস্যা বাদ, ভালো কিছু করবো আমি। আমার বিগ ডাটা এনালাইসিস বলে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা কোনো মানুষের কাছে আঠারো মাস মোবাইল ফোন থাকলেই সে পিরামিডের নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য।
আমাদের দেশে কেন, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন বিনামূল্যে – উনিশশো পঁচাশি সাল থেকে। ইউনিভার্সাল সার্ভিসের আওতায় গরীবমানুষগুলোর বাসায় ল্যান্ডলাইনের পাশাপাশি হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন – মাসে দুশো পঞ্চাশ মিনিটের টক্ টাইম সহ। ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন মানে এফসিসি, আমাদের বিটিআরসির মতো শুধুমাত্র গত বছরেই একশো ষাট কোটি ডলার খরচ করেছে ফোন কেনার পেছনে। এক কোটি পঁচিশ লক্ষ মোবাইল একাউন্ট ভরেছে টক্ টাইম দিয়ে। ঘুরে আসুন না এফসিসির লাইফলাইন প্রোগ্রামের সাইট থেকে। টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি এজেন্সীগুলো দায়বদ্ধতা থেকে সরকারের ইউনিভার্সাল এক্সেস দেবার জন্য চেষ্টা করছে – ফলশ্রুতিতে তৈরী হয়েছে ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস ফান্ড। প্রতিটা মানুষকে টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রদান করার দায়িত্ব সরকারের উপর পড়ে বলে ইউনিভার্সাল এক্সেস কথাটি এসেছে। যুক্ত করো সবাইকে। পয়সা আসবে কোথা থেকে? এর জন্য তৈরী করা হয় এই ফান্ড। সরকার, অপারেটর (যাদের বিজনেস কেস নেই সবাইকে যুক্ত করার) মিলে তাদের আয়ের কিছু অংশ চাঁদা দিয়ে (বাংলাদেশে এটা প্রায় এক শতাংশ) পিরামিডের নিচের মানুষকে যুক্ত করার চেষ্টা চালায়।
একটা যোগাযোগের মাধ্যম মানুষকে কতটা সাহায্য করে তা বোঝানোর জন্য লিখতে বসিনি আমি। আমাদের মাল্টিসিম পরিবেশে মানে অনেকের কাছেই কয়েকটা করে সিম থাকার পর কানেকশন ছিয়াত্তর শতাংশ হলেও বিগ ডাটা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মানুষ ভিত্তিক মোবাইল পেনিট্রেশন হচ্ছে বিয়াল্লিশ শতাংশ। মানে, আরো প্রায় ষাট শতাংশ জনগনের কাছে যোগাযোগের সরাসরি কোনো মাধ্যম নেই এখন।
ফিরে আসি আবার সেই বটম অফ দ্য পিরামিডের কাছে। টেলিডেনসিটি বাড়াতে হলে এই ষাট শতাংশের এক বিশাল অংশের হাতে তুলে দিতে হবে যোগাযোগের মাধ্যম, বিনামূল্যে। বাকিটা আসবে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্যা থেকে।
Last updated
Was this helpful?